মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়: জিএম কাদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, দেশের মানুষের ভোটাধিকার ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ফলে দেশের মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ, ভোটাধিকার ও সুষ্ঠু রাজনীতি চায় দেশের মানুষ। আমরা সংসদে, বক্তৃতা ও বিবৃতি দিয়ে গণমানুষের ভোটাধিকারের দাবিতে সোচ্চার আছি। বিদেশিরাও ভোটাধিকারের প্রশ্নে জোরালো ভূমিকা রাখছে। এ কারণেই সব বিষয়ে একটি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ময়মনসিংহ জেলার উপজেলা প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় সাবেক যুগ্ম কর কমিশনার জহিরুল ইসলাম জহির জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের জন্য ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। ক্লিন এনার্জির কারণে এক সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কদর ছিল। এখন অনেকেই আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছে না। আবার যাদের তৈরি আছে তারাও বন্ধ করে দিচ্ছে। স্বল্প খরচ ও পরিবেশের ক্ষতি হবে না এমন ভাবনা থেকেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এটা থেকে যে বিকিরণ হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি বিপজ্জনক প্রযুক্তি। দুর্নীতি না হলেই এটি সস্তা বিদ্যুৎ হতে পারে। একই কোম্পানি থেকে ভারত একই মডেলের দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করেছে দুই হাজার মেগাওয়াটের পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচে। আর আমাদের দেশে এই কোম্পানি থেকে ২৪শ মেগাওয়াটের দুটি স্থাপনে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই খরচ ১৬ বিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে। যে প্রকল্প তৈরিতে ভারত ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করে, সেই প্রকল্প করতে আমাদের খরচ হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ বিলিয়ন। বেশি খরচ হওয়ার কারণে এই বিদ্যুৎ তো সস্তা হবে না।
জিএম কাদের বলেন, বর্তমান ইউক্রেনের চেরনোবিল এবং আমেরিকা ও জাপানেও পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সামান্য দুর্ঘটনায় বিশ কিলোমিটার এলাকায় বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ে। বিকিরণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনো প্রাণী বসবাস করতে পারবে না। রাশিয়ার মতো দেশ দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় ১০ থেকে ১৫ বছর কাউকে ঢুকতে দেয়নি। আর বড় ধরনের দুর্ঘটনায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিকিরণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওই এলাকা থেকে মানুষ ও পশু-পাখি বের করে দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষও আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্ঘটনা এখন স্বাভাবিক ঘটনা। দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। পারমাণবিক দুর্ঘটনা হলে আমাদের মতো জনবহুল দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এমন প্রকল্প অনেক বেশি ব্যয়ে আমরা স্থাপন করেছি। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ রেখে যাচ্ছি। রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার ও ভারতীয় কনসালট্যান্টরা এই প্রকল্প পরিচালনা করবেন। বাংলাদেশের কোনো ইঞ্জিনিয়ার এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই। জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। আর আমাদের সরকার ভারতের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি খরচে এমন ভয়াবহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকার পার্টির অভ্যন্তরে গ্রুপিং সৃষ্টি করে আমাদের দুর্বল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় পার্টির একক নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে সরকার। আমাদের মাতৃতুল্য বেগম রওশন এরশাদকে জিম্মি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। জাতীয় পার্টি কখনো আপসের রাজনীতি করবে না। যারা দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করবে তাদের স্থান আর জাতীয় পার্টিতে হবে না। পার্টির স্বার্থে কোনো দ্বিধার অবকাশ নেই। জাতীয় পার্টির ভেতরে অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইলে সরকারেরই বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব। অস্তিত্ব আর অধিকার রক্ষার স্বার্থে আমরা আর কারও সঙ্গে আপস করব না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ময়মনসিংহ জেলা আহ্বায়ক ফখরুল ইমাম এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ জেলা সদস্য সচিব সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ভাইস চেয়ারম্যান ও ময়মনসিংহ মহানগর আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আহমেদ, সদস্য সচিব আবু মুসা সরকার, ময়মনসিংহ জেলা দপ্তর সম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান আরজু, হালুয়াঘাট উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম পাপ্পু, শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।