Logo
Logo
×

জাতীয় পার্টি

পাত্র সরকারি দলের হলে আলহামদুলিল্লাহ: ফিরোজ রশীদ

Icon

সংসদ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৩ পিএম

পাত্র সরকারি দলের হলে আলহামদুলিল্লাহ: ফিরোজ রশীদ

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘এখন জীবনকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার একমাত্র পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। এটা একটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রাজনীতি ছিল নেশা, যারা রাজনীতি করতেন, জীবনকে বাজি রেখেই করতেন। সেই নেশা আর নেই, এখন দেশে এটাই সবচেয়ে বড় পেশা।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে দেখা যেত পাত্র যদি রাজনীতি করে তাহলে বিয়ে দিত না। কারণ সে কোনো চাকরি পাবে না, তাহলে সে খাওয়াবে কী? খাওয়াতে হলে পত্রিকা অফিসে চাকরি করতে হবে, না হলে বটতলার উকিল হতে হবে, না হয় মুদি দোকানদার হতে হবে অথবা কেরানিগিরি। কিন্তু এখন যদি শুনে পাত্র সরকারি দল করে, তাহলে বলা হয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না। কারণ সে কিছু করতে পারবে।’

রোববার জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ অধিবেশনে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ফিরোজ এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় শুক্রবার এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। 

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জাতি এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নিরপেক্ষ কোনো মানুষ নেই। শিক্ষক, ডাক্তার, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই বিভক্ত। পুরো দেশই এখন দুই ভাগে বিভক্ত।’

‘সংসদের অনেক অর্জনের সঙ্গে দুর্বলতাও আছে’- এমন মন্তব্য করেন কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত একটা কমিশন (বঙ্গবন্ধু হত্যা) গঠন করতে পারছেন না।  বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে কারা জড়িত ছিল এই জাতি যদি জানতে না পারে, তাহলে ইতিহাসের ভগ্নাংশ রেখে লাভ নাই। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ছিল বিশাল ষড়যন্ত্রের কাজ। ডালিম, ফারুক, রশিদ গিয়ে হত্যা করল, বিষয়টা তা নয়। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল, তা আপনারা বের করলেন না।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একদিনে বঙ্গবন্ধু হননি। তার জীবনের বেশি সময় কেটেছে জেলে। তিনি ঢাকায় বসে নেতৃত্ব দেননি। তিনি প্রত্যেকটি অঞ্চলে গিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ কিন্তু আমরা ঘরের বাইরে যাই না। কাঁচের দেয়ালে বসে নেতৃত্ব দেই। আর যারা আসে তাদের আমাদের লোকজন কোরবানির গরুর মতো, গলায় মালা দিয়ে রুমে নিয়ে বসান। আর টাকার বস্তা দিলে মনোনয়ন দেন। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আরেকটি দুর্বল দিক।’ 

ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে কাউকে দেখিনি। একথা আমার নয়। আওয়ামী লীগের নেতাদেরই কথা। আর আমি তখন তরুণ। আমরা ঢাকায় ছিলাম, আমরা প্রস্তুত ছিলাম। নেতৃত্বের অভাবে আমরা সামনে এগোতে পারিনি। আমাদের কেউ ডাক দেয়নি, এটি ইতিহাস।’

জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমরা আইন প্রণয়ন করি। সংসদে আইন প্রণয়নের সময় আমরা কতজন উপস্থিত থাকি? আইন পাশ করার সময় সবাইতো সংসদে থাকে না। আমলারা আইন ড্রাফট করে দেয়, আমরা হ্যাঁ, না বলে পাশ করে দেই। এজন্য রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, একসময় বাইরে থেকে আইন প্রণয়ন করতে কনসালটেন্ট আনতে হবে। কারণ আমাদের মধ্যে আইন প্রণয়ন করার মতো কেউ থাকবে না।’

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রে কোনো কাজ হয় না। যদি পেটে ভাত, শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থানের অবস্থা না থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশাল ক্ষমতাধর। বিশ্বের ইতিহাসে এত ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রী আছে কিনা- তা আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এক এক করে জাতির পিতার সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এটা তার জীবনের বড় সাফল্য।’

তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে প্রত্যেকটি আসনে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির ২৬টি আসনেও লাঙল দেবেন না, সেখানেও নৌকা দেবেন। আমাদের ভয় পান কেন? প্রয়োজনে সব আসন আপনাদের ছেড়ে দেব।’

সরকারকে উদ্দেশে করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘শান্তভাবে দেশ পরিচালনা করুন। নির্বাচনের বাকি আর ৯ মাস। একটি বড় রাজনৈতিক দল বলে দিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই সতর্ক হোন, সামনে কিন্তু বড় বিপদ আসছে।’

হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে কেউ বলছেন সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রাখা যাবে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা যাবে না। কারণ এসব সাংঘর্ষিক। এখন আপনারা এগুলো বলছেন কেন? আর মাত্র ৯ মাস বাকি নির্বাচনের। এই মুহূর্তে আরেকটি নতুন ইস্যু সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন কেন? এর উদ্দেশ্য কী? আপনারা তো সহি সালামতে নৌকায় উঠে বসে গেছেন। নৌকার কান্ডারি শেখ হাসিনা, নৌকা টানছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকেই নৌকা বেয়ে ওপারে যেতে হবে। আপনারা তো নিশ্চিতভাবে নৌকায় উঠে বসে আছেন।’

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আবার বাবা আওয়ামী লীগের গোপালগঞ্জের সভাপতি ছিলেন। আমি ১৯৭৩ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, জিল্লুর রহমান, ওবায়দুর রহমান সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, তোমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু পরে আমি মনোনয়ন পাইনি। কেন মনোনয়ন দেওয়া হয়নি সেজন্য আমাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এরপরও মনোনয়ন চেয়েছিলাম মনোনয়ন পাইনি। আর চিঠি দিয়েও জানানো হয়নি। তখন বুঝলাম আগের আওয়ামী লীগ বদলে গেছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম