
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩১ পিএম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কাজের আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমানো বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণের অভিযোগ, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিয়োজিত করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ২২ বছর বয়সি এক বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যুর খবর সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। মস্কোয় বাংলাদেশি দূতাবাস জানিয়েছে, ডজনখানেক পরিবার তাদের ছেলেদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সবার একই অভিযোগ, রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। খবর এএফপির।
মোহাম্মদ আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি ও তার শ্যালক বিদেশে কর্মী সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানে নিবন্ধন করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাইপ্রাসে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পরে তাদের রাশিয়ায় পাঠানো হয়। আকরাম বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে যাব, এটা আমরা জানতাম না।
আকরাম বলেন, কয়েক হাজার ডলার খরচ করে আমি দেশে ফিরে এসেছি। যদিও আমার শ্যালক এখনো রাশিয়ায় রয়ে গেছে। সেখানে সে রুশ সেনাবাহিনীতে আছে। নিয়মিত বাড়িতে ফোন করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পরিবারকে অনুরোধ জানায়।
আকরাম জানান, ১০ জন বাংলাদেশির একটা ছোট্ট দল ছিল তাদের। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাদের হজ ভিসায় প্রথমে সৌদি আরবে নেওয়া হয়।
কয়েক সপ্তাহ সেখানে রাখার পর রাশিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর রুশ ভাষায় লেখা একটি চুক্তিপত্র দেওয়া হয় তাকে। এই বাংলাদেশি বলেন, তিনি রুশ ভাষা জানেন না। তাই চুক্তিপত্রে কী লেখা ছিল, সেটি বুঝতে পারেননি। তবে সই করে দিয়েছিলেন। এরপর সেন্ট পিটার্সবার্গ শহর থেকে তাদের বাসে করে একটি সেনাক্যাম্পে নেওয়া হয়। সেখানে এক রাত রাখা হয় তাদের। পরদিন সকালে তাদের কয়েকজনকে সামরিক ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। সেটি পরার পর তাদের প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি রুশ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে ২২ বছরের বাংলাদেশি মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ নিহত হন। গত ২৭ মার্চ এ তথ্য জানায় তার পরিবার। এরপরই উদ্বিগ্ন স্বজনরা মস্কোয় বাংলাদেশি কূটনীতিকদের বার্তা পাঠাতে শুরু করেন। ইয়াসিনের স্বজন আবুল হাশেম বলেন, মার্চের শেষদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি চলার সময় ইয়াসিনের এক বন্ধু বাড়িতে ফোন করেন। তিনি ইয়াসিনের মৃত্যুর খবর দেন। পরে আমরা রুশ কমান্ডারের কাছ থেকেও ফোন পাই। তিনি বলেন, ইয়াসিনের ওই বন্ধু বাংলাদেশি। তিনিও রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন।
ইয়াসিনের পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন ইয়াসিন। ওই সময় দালালের মাধ্যমে বিদেশে যেতে বাড়ি থেকে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। দালাল বলেছিলেন, রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির (ইলেকট্রিশিয়ান) কাজ দেওয়া হবে তাকে। কিন্তু ডিসেম্বরে তাকে রুশ বাহিনীতে যোগ দিতে হয়। আবুল হাশেম বলেন, আমরা তাকে (ইয়াসিন) পাঠানোর জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। আর এখন আমরা তার লাশ পাওয়ার অপেক্ষা করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি, যাতে ইয়াসিনের মা শেষবারের জন্য ছেলের মুখটা দেখতে পারেন।
মস্কোয় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফরহাদ হোসেন বলেন, ইয়াসিন শেখের বিষয়ে আমরা কয়েকদিন আগে জেনেছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা যে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সেটা নিশ্চিত করে ফরহাদ বলেন, ছেলেদের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানার প্রত্যাশায় আমরা বাবা-মায়েদের কাছ থেকে অনুরোধ পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ডজনখানেক অনুরোধের জবাব দিয়েছি। ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসপি মুস্তাফিজুর রহমান জানান, মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে এক বাংলাদেশি নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। রাশিয়ায় মানব পাচারে সক্রিয় থাকা চক্রের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রথম সতর্ক করা ব্যক্তিদের একজন আকরাম হোসেন। তিনি নিজেকে রুশ সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তি হিসাবে দাবি করে বলেন, পাচারকারীরা তাকে রাশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন।