Logo
Logo
×

জাতীয়

মাগুরার সেই শিশুর করুণ মৃত্যুতে নাড়া

স্থাপন হচ্ছে ২৫০০ শিশু সুরক্ষা কমিউনিটি হাব

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১০:০২ এএম

স্থাপন হচ্ছে ২৫০০ শিশু সুরক্ষা কমিউনিটি হাব

ছবি: সংগৃহীত

মাগুরার আট বছরের শিশুধর্ষণ ও নির্যাতনের করুণ মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সব স্তরের মানুষকে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হবে দুই হাজার ৫০০টি শিশু সুরক্ষা কমিটউনিটি হাব। প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে পাঁচটি করে হাব তৈরি করা হবে।

 এগুলোর মাধ্যমে নারী ও শিশু প্রতি সহিংসতা এবং যেকোনো ধরনের ক্ষতিকর আচরণ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য ‘প্রটেকশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড হার্মফুল প্র্যাকটিসেস এগেইনস্ট চিলড্রেন অ্যান্ড উইমেন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব দেওয়া প্রকল্পটি নিয়ে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করতে উদ্যোগী মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানানো হতে পারে।

জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং ইউনিসেফের অনুদান থেকে ১৩০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা রোববার যুগান্তরকে জানান, দেশে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছে। মাগুরার শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু প্রতিটি বিবেকবান মানুষের মনকে দুঃখে ভারক্রান্ত করেছে। এসব ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং মানবিক সংকট হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৮৯ শতাংশ শিশু শারীরিক সহিংসতা এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। এ অবস্থা উদ্বেগজনক। ঘরে, স্কুলে, কর্মস্থলে এমনকি অনলাইনেও শিশুদের ওপর নির্যাতন হয়রানি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, সংবিধানে নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার এবং বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার রয়েছে। শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন ও নীতি তৈরির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া দেশের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ শিশু ও কিশোর। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৬নং গোলে বিশেষভাবে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে সাহসী এবং স্পষ্ট কার্যক্রম গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কেননা ১৬ এর ২নং টার্গেটে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, শিশুদের বিরুদ্ধে নির্যাতন শোষণ, পাচার এবং সহিংসতার সব রূপ নির্মূল করতে হবে। এ অবস্থায় শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত করতে জাতীয় পর্যায়ে প্রকল্প নেওয়া জরুরি। এসব দিক বিবেচনা করে এ প্রকল্পটির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রমগুলো হবে-চার বছরে দুই হাজার ৫০০ কমিউনিটি হাব স্থাপন ও পরিচালনা করা। 

এছাড়া শিশু সুরক্ষা কমিউনিটি হাবে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা এবং ক্ষতিকর আচরণ প্রতিরোধে নিয়মিত সেশন পরিচালনা করা। শিশুদের বিকাশে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রম থাকবে। আরও থাকবে, অনিবন্ধিত শিশুদের জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা, জীবন দক্ষতা ও মনোসামাজিক সহায়তার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, শিশু বিবাহ-শিশু শ্রম-শারীরিক শাস্তি-শিশুর প্রতি যেকেনো ধরনের নির্যাতন এবং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ। 

পাশাপাশি ইতিবাচকভাবে সন্তান লালন পালনের বিষয়ে পিতা-মতার দক্ষতা বাড়ানো হবে। শিশুবান্ধব আইন ও নীতি তৈরিতে সহায়তা করার জন্য কর্মশালা বা সেমিনারের আয়োজন থাকবে। শিশু কিশোরদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কিশোর-কিশোরীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ। শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠায় কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ ২২ হাজার ৮৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ যৌক্তিকতা ও প্রস্তাবিত ব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয় হয়নি। এজন্য পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে। এছাড়া ক্রয় পরিকল্পনা সরকারি ক্রয় নীতিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করে সংশোধন করতে সুপারিশ দেওয়া হবে। কি কি বিষয়ে গবেষণা করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইবে পিইসি। 

প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ১০০ জন ফিল্ড স্টাফ নিয়োগের নীতিমালা, নির্বাচন পদ্ধতি এবং ব্যয় বিভাজন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে সভায়। পাশাপাশি সেমিনার, বিদ্যুৎ বিল, বিভিন্ন ভাড়া, শ্রমিক মজুরি, মুদ্রণ ও বাঁধাই, অন্যান্য মনিহারি, প্রচারণা-বিজ্ঞাপন ইত্যাদি খাতে প্রস্তাবিত ব্যয়ের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হবে। ছয় হাজার ১৬০ জন শিশুকে পোশাক দেওয়ার বিষয়ে শিশু নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইবে পিইসি সভা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম