ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছি: সালমা ইসলাম

যুগান্তর প্রতিবেদন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

সাবেক সংসদ সদস্য ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেছেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দোহার ও নবাবগঞ্জবাসীর পাশে রয়েছি। যেকোনো দুর্যোগ বা আনন্দ-উৎসব হোক সবার আগে আমি ছুটে আসি আপনাদের মাঝে। আমার স্বামী আপনাদেরই সন্তান মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সব সময় আপনাদের কথা চিন্তা করতেন। তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল আপনাদের নিয়ে। তাই প্রতি বছর আমি ঈদের উপহার নিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা করি। এবারও আপনাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমার স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে ঈদে উপহার নিয়ে এসেছি। দোয়া করবেন নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন যেন সব সময় আপনাদের পাশে থাকতে পারে।
ঢাকার নবাবগঞ্জে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র মানুষের জন্য ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণী অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার সকালে বর্ধনপাড়ায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সালমা ইসলাম। একই দিন উপজেলার আগলা, চূড়াইন, গালিমপুর, বক্সনগর, কৈলাইল ও শোল্লা ইউনিয়নে এসব ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার নিতে আসা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের দীর্ঘ লাইন। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন উপহার নেওয়ার জন্য। নারীদের শাড়ি ও পুরুষদের লুঙ্গি তুলে দিচ্ছেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। এছাড়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঈদ উপহার হিসেবে লুঙ্গি দেওয়া হয়।
এ সময় কথা হয় বৃদ্ধা আলেকজান বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নাই। ছেলের সঙ্গে থাহি। সংসারের ৬ জন মানুষ। ও কামলা দিয়ে (কাজ করে) যা কামাই করে তাই দিয়ে কোনো মতে খেয়ে বাঁইচা আছি। নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য আমাগো নাই। তাই প্রতি বছর আশায় থাকি, সালমা ম্যাডাম কহন নতুন কাপড় দিব। সেই কাপড় ঈদে পড়ুম। ’
তার কথা শেষ হতে না হতেই কথা শুরু করেন তার সঙ্গে আসা রহিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাবা কয়জন গরিবের খবর রাখে। একমাত্র সালমা ম্যাডামকে দেহি অনেক বছর ধরে ঈদ, শীতসহ যেকোনো বিপদ-আপদ এবং উৎসবে আমাদের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, পোশাক বিতরণ করে থাকেন। দোয়া করি আল্লাহ যেন তারে দীর্ঘদিন বাঁচাইয়া রাখেন এবং তার স্বামী নুরুল ইসলামকে বেহেশত নসিব করেন। ’
লুঙ্গি পেয়ে কেমন লাগছে? প্রশ্ন করতেই চোখ টলমল করে উঠে ভিক্ষুক আক্কাস উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘আমি ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। তাই ভিক্ষা করে সংসার চালাই। আমার মতো মানুষের ঈদে নতুন লুঙ্গি কেনার সামর্থ্য নাই বাবা; কিন্তু সালমা ম্যাডামের অসিলায় কয়েক বছর ধরে নতুন লুঙ্গি পরে ঈদের নামাজ পড়তে পারি। আইজ নতুন লুঙ্গি পাইলাম, এটা পরেই ঈদের নামাজ পড়ুম। হুনলাম ম্যাডামের স্বামী নুরুল ইসলাম ভাইয়ের নামে কি যেন একটা করছে- সেখান থেকে এবার আমাদের লুঙ্গি ও মহিলাদের কাপড় দিছে। নুরুল ইসলাম ভাইয়ের জন্যও আমি দোয়া করি। ’
ঈদ উপহার হিসেবে লুঙ্গি পেয়ে খুশি বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আসলে লুঙ্গিটা বড় বিষয় না। সালমা ম্যাডাম নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে আমাদের স্মরণ করেছেন এটাই বড় প্রাপ্তি।
তারা আরও বলেন, বর্তমান সমাজে আলেমদের কথা কেউ ওইভাবে চিন্তা করেন না। সেদিক দিয়ে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন নজির স্থাপন করলেন। ছোট উপহারও মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেয়- এটা তার প্রমাণ। আমরা সব সময় দোয়া করি, যার নামে ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকে যেন আল্লাহ বেহেশত দান করেন এবং সালমা ম্যাডামকে যেন সুস্বাস্থ্য দান করেন।
নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, শান্তি-শিক্ষা-সেবা ও সামাজিক উন্নয়নই নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য। পারস্পারিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরোপকারের মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণেই এর যাত্রা। আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এতিম, গরিব, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভরণ-পোষণ, ছিন্নমূল ও পথবাসীদের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সব শ্রেণির নাগরিকের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গড়ার দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি।
সম্প্রতি শীতে দোহার ও নবাবগঞ্জে কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া অসহায় ও দুস্থদের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।