বাড়তি দামেই রমজান শুরু
ইফতার পণ্যে অসাধুর চোখ

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম

রমজান মাস ঘিরে চাল, ডালের পর এবার ইফতার পণ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের চোখ পড়েছে। একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি মুড়ির দাম বাড়ানো হয়েছে ৩০ টাকা। প্রতি টিন (১৬ লিটার) সরিষার তেলে ৩০০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি এখনো বাজারশূন্য বোতলজাত সয়াবিন তেল। আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমায় পাইকারিতে খেজুরের দাম কমেছে।
তবে খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কেজিতে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা বাড়তি লাভ করছে। সঙ্গে ফলের বাজারেও আগুন। এছাড়া তিন দিনের ব্যবধানে বেগুন, শসা ও লেবুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারের নীতি সহায়তায় ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম কমলেও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাড়তি দরেই শুরু হয়েছে সংযমের রমজান মাস।
এদিকে বেসন কিনতে ক্রেতার কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। প্রাণ সস কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গত বছরের তুলনায় ইসবগুলের ভুসি, ট্যাঙ, রুহ-আফজার দাম কমেছে। তবে আরেক দফা বেড়েছে ধনেপাতা, পুদিনাপাতার দাম। শনিবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। যা একদিন আগেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ছিল। প্রতিটিন সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩১০০ টাকা। যা সাত দিন আগে ২৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা দুই দিন আগে ৮০ টাকা ছিল। পাশাপাশি বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা। যা আগে ১২৫-১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রাণ সস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা, যা সাত দিন আগে ২৮০ টাকা ছিল। রুহ-আফজা ৭০০ মিলির বোতল বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা ও ৩০০ মিলি ৩০০ টাকা। ইসবগুলের ভুসি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৯০০-২০০০ টাকা ছিল। এদিকে রোজার শুরুর আগের দিনও বাজারশূন্য বোতলজাত সয়াবিন তেল। তবে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ২১ নভেম্বর খেজুর আমদানিতে মোট শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪১ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন মূল্য যৌক্তিক করা হয়। যা চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এতে আমদানিতে খেজুরের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে পাইকারি আড়তে কমেছে দাম। পাইকারিতে আজওয়া খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এই খেজুর ১২০০-১৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি আড়তে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২৫০-১৩৮০ টাকা। ম্যাডজুল পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা। যা খুচরা বাজারে ১৪০০-১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে জাহিদি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। যা খুচরা বাজারে ২৫০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা সব সময় সুযোগ খোঁজে। প্রতিবছর রমজান মাস এলেই কিছু পণ্যের দাম বিক্রেতারা বাড়িয়ে দেয়। এবারও তাই হয়েছে। বাজার তদারকি সংস্থার এই বিষয়ে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ফলে বিক্রেতারা সুযোগ নিয়ে কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। তাই এই মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতার দিক থেকে বিক্রেতাদের বের হয়ে আসতে হবে। সঙ্গে ক্রেতাদের ১০ দিনের পণ্য একদিনে কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি বাজার তদারকি জোরদার করে মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে।
খুচরা বাজারে প্রতি আঁটি ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা। তবে এ পরিমাণে ধনেপাতা ও পুদিনাপাতা মাসখানেক আগে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাত দিন আগেও প্রতি হালি লেবু ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শনিবার খুচরা বাজারে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতি পিস লেবুর দাম হয় ১৫-২০ টাকা। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ৫০-৬০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা। যা আগে ৫০-৬০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি হাইব্রিড শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-২০ টাকা বেশি।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। যা সাত দিন আগে ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলানায় ২০ টাকা বেশি। এছাড়া প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০-৮০০ টাকা। যা কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। আর খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০০-১২৫০ টাকা।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ২১০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি আদা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-২৫০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসলাপণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সঙ্গে প্রতি কেজি এলাচ ৪৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৪৬০০ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, আমরা রোজা ঘিরে সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করছি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো পণ্যের দাম কমেছে। তবে অন্যান্য পণ্যের দাম কী কারণে বেড়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় এনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। তিনি জানান, ভোজ্যতেলের সরবরাহে কিছু ব্যবসায়ী অসহযোগিতা করছে। যা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এই সংকটের কারণ খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে ভোজ্যতেল রিফাইনারির কোম্পানিকে শোকজ করা হয়েছে। তারা লিখিত জবাবও জমা দিয়েছে। যা পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।