জুলাই আন্দোলনে জাবিতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের বিচার দাবি

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২১ পিএম

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনের সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিদ্যুৎ বন্ধ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে সার্বভৌমত্ব আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।
রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত বিচারের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সার্বভৌমত্ব আন্দোলনের সংগঠক ফরিদ হোসেন লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সেবা বন্ধ করে দেশকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করেছিল এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও গণহত্যা চালিয়েছিল। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও সাভার এলাকা অন্যতম। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনে যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরব হয়ে উঠেছিল, ঠিক তখনই ১৫ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রদের আন্দোলন বানচাল করতে ও ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সিসিটিভি ফুটেজের তথ্য গায়েবসহ হলগুলোতে বিদ্যুৎ ও পানি ঘাটতি সৃষ্টির মাধ্যমে আবাসন ব্যবস্থার পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা চালানো হয়। টানা দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বন্ধ করে কৃত্রিম বিদ্যুৎ ও পানি সংকট সৃষ্টি করে আবাসিক হলগুলো খালি করার জন্য ফ্যাসিস্ট সরকার ও তার সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ জোর প্রচেষ্টা চালায়।’
ফরিদ হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার যখন বারবার চেষ্টা করার পরেও বিপ্লবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আবাসিক হল ছাড়তে বাধ্য করতে পারেনি, তখন শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের ১৬ ও ১৭ জুলাই রাতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তী, সাবেক মেম্বার দেবাশীষ চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, পরিচালক মো. শফিকুর রহমান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদার, পরিচালক একেএম ইস্কান্দার আলী, সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আসাফউদ্দৌলা, উপপরিচালক কারিগরি মো. নুরুন্নবী, প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রহিম মল্লিক, বিশেষ করে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মোল্লা মো. আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সদস্য মো. আব্দুর রউফ মিয়া কূটকৌশল আটেন ও গভীর রাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ছত্রভঙ্গ করার ষড়যন্ত্র করেন। এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন সাভার ও জাবি ছাত্রলীগ কর্মী এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তা। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে পাহাড় সমান দুর্নীতি করতে আসামিরা সহায়তা করেছেন এবং নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের হীনউদ্দেশ্যে সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, স্থানীয় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের নির্দেশে ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের জোগসাজশে এবং স্থানীয় অজ্ঞাতনামা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলন দমনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে গেছে। দেশে যখন সব ছাত্ররা প্রাপ্য দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে এসেছিল, তখন আসামিরা তাদের দমনের জন্য দেশবিরোধী নীল নকশা প্রণয়ন করেছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।ওই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দমন নিপীড়ন করেছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একইভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নুরুল আলম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন, সাবেক প্রভোস্ট কমিটি সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান, সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবুল হাসানের প্রত্যক্ষ মদদে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাভার এলাকায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নিকৃষ্ট ও ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শত শত ছাত্র জনতাকে পেটানো, হত্যা, হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালায়। ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর সিনিয়র জিএম বিদ্যুৎ বন্ধ করে স্থানীয় আওয়ামী প্রশাসনকে জানালে ভীতিকর অন্ধকার পরিবেশে সাভার ও জাবি ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিপ্লবী এবং নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় গুম ও খুনের চেষ্টাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করা ও হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। এই অকল্পনীয় ও ভয়াবহ অত্যাচারের বর্ণনা যুগান্তরসহ দুটি গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে।২৪-এর এই গণহত্যায় সহযোগী এসব মানুষরূপী পশুদের স্বাধীনভাবে মুক্ত বিচরণের অধিকার নেই। যাদের হাতে দেশের ছাত্র-ছাত্রী নিরাপদ নয়, দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিরাপদ নয়; তাদেরকে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আবু সাইদ-মুগ্ধের বাংলায় ২০০০ শহিদের রক্তের ওপর এসব বেইমান দাঁড়িয়ে থাকবে, তা এদেশের শান্তিকামী জনগণ মেনে নেবে না। এখনো পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ সচেতন কোনো মহল এ বিষয়ে এগিয়ে না আশায় আমরা হতাশ।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা, মেজর (অব.) শোয়েব আহমেদ প্রমুখ।