Logo
Logo
×

অন্যান্য

এফইআরবি নেতাদের সঙ্গে জ্বালানি সচিব

এলএনজি আমদানিতে জোর সরকারের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

এলএনজি আমদানিতে জোর সরকারের

চলমান গ্যাস সংকট কাটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমাদানির ওপর জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। উচ্চমূল্যের ফার্নেস অয়েল আমদানি বন্ধ করে সে টাকায় আরও কম দামের এলএনজি আমদানি করা হবে। আর সেই এলএনজি দিয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে। এজন্য এ বছর এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে এলএনজি কেনার পরিমাণ কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

অপরদিকে ভোলার গ্যাস এলএনজি করে নদীপথে মূল ভূখণ্ডে আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য শিগগির দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

মঙ্গলবার বিকালে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্সের (এফইআরবি) নির্বাহী কমিটির সঙ্গে সভায় জ্বালানি সচিব এসব কথা বলেন।

এ সময় এফইআরবির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর, নির্বাহী পরিচালক সেরাজুল ইসলাম, পরিচালক মুজিব মাসুদসহ সংগঠনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় জ্বালানি সচিব বলেন, এখন দেশে গ্যাসের সংকট চলছে। আমাদের নিজস্ব উৎপাদনও কমে এসেছে। এজন্য আশু সমাধান হিসেবে ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। 

তিনি জানান, গত বছর ৮৪ কার্গো এলএনজি আনা হয়েছে। চলতি বছর আমরা ১১৫ কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা করেছি। এ বছরে অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা লাগবে। তিনি বলেন, জ্বালানি কিনতে প্রতি সপ্তাহে ১৮০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম সবসময় একই থাকে না। তাই আমরা চেষ্টা করছি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি না কিনতে। এর বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি কেনার চেষ্টা করেছি। কয়েকটি দেশ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছি। এর মধ্যে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে শিগগির আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করব। এছাড়া আলজেরিয়া ও কাজাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ সময় তিনি জানান, ভোলার গ্যাস এলএনজি আকারে মূল ভূখণ্ডে আনা হবে। তারপর তা রিগ্যাসিফিকেশন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এজন্য শিগগির দরপত্র আহ্বান করা হবে। 

তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুত ৩১টি কূপ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আর দীর্ঘমেয়াদে ১০০টি কূপ খনন করা হবে। এজন্য বাপেক্সের জন্য তিনটি রিগ কেনা হচ্ছে। কূপ সংস্কার করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোই মূল লক্ষ্য।

জ্বালানি ক্রয়ে আর্থিক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ফান্ড সংকটে রয়েছি। অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা চারটি বিষয়ে এখন সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, গ্যাস, জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য ও সার। আমাদের টাকা আছে, সংকট ডলারের। আশা করছি এই সংকটও কমে আসবে। 

জ্বালানি সচিব বলেন, ভোলার দুটি গ্যাসফিল্ড থেকে দিনে ৮০ মিলিয়ন গ্যাস এলএনজি আকারে আনার প্রক্রিয়া চলমান। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

এলএনজি আকারে আনার পাশাপাশি ভোলা-বরিশাল-খুলনা এবং বরিশাল থেকে ঢাকা পাইপলাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই এলাকায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুতের আশা করা হচ্ছে। কাগজপত্রে ১২ টিসিএফ মজুতের কথা বলা হলেও কিছুটা কম করেই বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ভোলায় দুটি গ্যাসফিল্ডে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯টি কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম। এখান থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। চাহিদা না থাকায় মাত্র ৮০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না। অপর চারটি কূপের মধ্যে একটির পাইপলাইন এবং তিনটি কূপের প্রসেস প্ল্যান্ট রেডি হচ্ছে।

ওই এলাকায় আরও ১০টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, অনেকে ধারণা করেন সেখানে ১২ টিসিএফ গ্যাস মজুত রয়েছে। পাইপলাইন করতে গেলে ৫ বছর সময় প্রয়োজন হবে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে এলএনজি আকারে আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। দুটি ফিল্ডের মধ্যে একটি থেকে ৬০ মিলিয়ন অন্যটি থেকে ২০ মিলিয়ন আনা হবে।

গ্যাস সংকট নিয়ে কী ভাবছে সরকার- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে রয়েছে চুরি ও সিস্টেম লস কমিয়ে উন্নতি করা। গড়ে ১০ শতাংশের মতো সিস্টেম লস রয়েছে। কিছু কূপের সংস্কার (ওয়ার্কওভার) করে উৎপাদন বাড়ানো এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোরদার করা। আমরা ১০০টি কূপ খননের প্রক্রিয়া শুরু করেছি, বাপেক্সের জন্য আরও তিনটি রিগ কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি রিগের টেন্ডার করা হয়েছে। পাশাপাশি সিসমিক সার্ভের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের যে দুটি এফএসআরইউ রয়েছে যার মাধ্যমে বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করা সম্ভব। আরও দুটি এফএসআরইউ স্থাপন এবং ল্যান্ডবেজড টার্মিনাল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা চাই দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে। না হলে এলএনজি আমদানি যত বাড়বে, গাসের দাম তত বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরে ১০১ কার্গো আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ৫৬ কার্গো আসছে জিটুজি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে কাতার ও ওমান থেকে। ব্রুনাই থেকে জিটুজি ভিত্তিতে বছরে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে। নাইজেরিয়া এবং উজবেকিস্তান থেকে আমদানির জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। দাম প্রসঙ্গে বলেন, ১০১ কার্গো আমদানি করে বিদ্যমান দরে বিক্রি করলে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। যা বছরে দাঁড়াবে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

তিনি বলেন, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে আসছে অর্ধেকের মতো। আর ২৫ শতাংশ এলএনজি আমদানি করে জোগান দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ২৫ শতাংশ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমদানির পর মিশ্রিত গ্যাসের দর পড়ছে ৩০ টাকার মতো। আর বিক্রি করা হচ্ছে ২২.৮৭ টাকা হারে। এতে করে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা নতুন শিল্পে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম