Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

নেই জনবল যন্ত্রপাতি ও নিজস্ব কার্যালয়

আজ নিরাপদ খাদ্য দিবস

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নেই জনবল যন্ত্রপাতি ও নিজস্ব কার্যালয়

ছবি: সংগৃহীত

জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবারে বাজার সয়লাব। এরপরও নীরব বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধানের দুর্বলতা এবং সরকারের সদিচ্ছার অভাবে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সংস্থাটি তেমন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। পরীক্ষাগার ও ল্যাবটেকনিশিয়ানের অভাব আছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেই নিজস্ব ভবনও। ভাড়া করা অফিসে চলছে কাজ। নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জনগুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটি। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘খাদ্য হোক নিরাপদ সুস্থ থাকুক জনগণ’। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রাম অনুসারে ৩২৬ জনের অনুমোদিত জনবলের মধ্যে জেলা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় পর্যন্ত আছে ১৬৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রধান কার্যালয়ে ১৩৭ জনবল থাকার কথা থাকলেও আছে ৪৮ জন। জেলা পর্যায়ে ১৯২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১২৮ জন দিয়ে কাজ চলছে। দেশে খাদ্যপণ্য ও খাদ্যের মান নির্ণয়ে নেই কোনো পরীক্ষাগার। তাৎক্ষণিক খাদ্যমান যাচাইয়ে প্রতি জেলায় একটি করে মোবাইল ল্যাব ও বড় জেলায় একাধিক ল্যাব থাকার কথা। প্রতিষ্ঠার প্রায় এক যুগ পর মাত্র ৭টি মোবাইল ল্যাব সংগ্রহ করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের কৃষিজাত পণ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হেভিমেটালের উপস্থিতি দেখা গেছে। বাইরের জঞ্জাল এসে পড়ছে খাবার প্লেটে। শাক-সবজি, আলু, পেঁয়াজ, পটোল, কলা, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, মরিচ, ধনেপাতাসহ সব ধরনের শাকে রয়েছে ক্ষতিকর হরমোন। কীটনাশক ছিটিয়ে পরদিন উল্লিখিত কৃষিজাত পণ্য বাজারে তোলা হয়। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং মাছের ফিডে ভেজাল। ফলে নিরাপদ ফল, ফসল ও মাছ, মুরগি, ডিম, দুধ, মাংস পাওয়া ভোক্তার জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে। বাজারের শিশুখাদ্যে ভেজাল সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ হলেও আমদানি করা পণ্যের গুণগত মান দেখার এখতিয়ার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেই। বিশ্বের প্রায় সব দেশ আমদানি খাদ্যশস্যের গুণগতমান দেখতে পৃথক আইন ও বিধি প্রণয়ন করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।

প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধানের দুর্বলতাও বিদ্যমান। অনিয়ম বন্ধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের জরিমানা বা ভেজাল খাদ্যদ্রব্য জব্দ করার ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা নেই ভেজাল খাদ্যের কারখানা সিলগালা করার। সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক রাষ্ট্রীয় সংস্থা থাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালনা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে ঠুঁটোজগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনবল সংকট আছে। আইন ও বিধিবিধানেও কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা সংকট নিরসনে কিছু সময় লাগবে, কাজ চলছে। সচিব বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে একাধিক সংস্থা থাকায় আইনের ওভারলেপিং রয়েছে। সব প্রতিষ্ঠান একটি ছাতার নিচে আসার আগে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া মুশকিল হবে। তবে আইন ও বিধিবিধান সংশোধনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া যুগান্তরকে বলেন, সরকার সংস্থাটির জন্য নতুন সাতটি মোবাইল ল্যাব সংগ্রহ করেছে। এসব ল্যাব দিয়ে স্পটে গিয়ে সরাসরি খাদ্যের মান যাচাই করা হচ্ছে। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি মিনি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকায় একটি রেফারেন্স ল্যাব এবং খুলনা ও চট্টগ্রামে দুটি বিভাগীয় স্থায়ী ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কাজে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জাইকা) আর্থিক সহায়তা দেবে। বিদেশ থেকে আমদানিকরা খাদ্যশস্য ও খাদ্যপণ্যের মান যাচাইয়ের কোনো ব্যবস্থা এতদিন ছিল না। নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে কোন তারিখে কোন বন্দর হয়ে কোন খদ্যশস্য ও খাদ্যপণ্য আমদানি করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কোন স্পটে নমুনা পরীক্ষা করা হবে কোথায় হবে তা তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, জনবল সংকট নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। সংস্থাটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাত্র ৪৮ জন কর্মকর্তা কাজ করেন। সংস্থাটিতে বেশ কয়েকটি উইং রয়েছে এবং প্রতিটি উইংয়ে ৫/৬ জন অফিসার। ল্যাবটেকনিশিয়ান নেই। মাত্র দুজন জনবল নিয়ে চলছে জেলা পর্যায়ের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম। জেলায় দুজনের একজন কর্মকর্তা ও আরেকজন নমুনা সংগ্রহকারী। সংস্থাটির সীমাবদ্ধতাগুলো নিরসনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সংস্থাটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মাহবুব কবির যুগান্তরকে বলেন, কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়, স্বাধীন ও পৃথক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা না হলে খাদ্যের নিরাপত্তা বা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অসম্ভব। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। স্বাধীন সত্তা বলে সংস্থাটির কিছু নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, চার বছর আগে সংশোধিত নিরাপদ খাদ্য আইনের খসড়া তৈরি হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রণয়ন হয়নি কেন এমন প্রশ্নে মাহবুব কবির বলেন, মন্ত্রণালয় চায়নি তাই হয়নি। এভাবে কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা যায় না। তিনি বলেন, জনবল নাই, মেশিনারিজ নাই পরীক্ষাগার বা ল্যাব এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান নাই। সংস্থার কর্মকর্তাদের জরিমানা করার ক্ষমতা নাই, এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানে অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, বিপণন, পরিবহণ, বাজারজাত করেলে ধরা বা সিলগালা করার ক্ষমতাও নেই। সে ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দিতে হবে। সংস্থাটির চেয়ারম্যানের পদ সিনিয়র সচিব অথবা সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করতে হবে। আইন ও বিধিবিধান তৈরি করে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ব্যর্থতা মূল্যায়ন করতে হবে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান সমন্বয়হীনভাবে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) অন্যতম। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় নেই। যে যার মতো বাজারে গিয়ে ভেজাল, মানহীন ও অনিরাপদ খাদ্য বিক্রয়কারীদের জরিমানা করছে। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে প্রশিক্ষণ ও গাইডলাইন তৈরি করে তা কঠোরভাবে অনুসরণ ও অনুকরণে পদক্ষেপ নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ রয়েছে। তারা জানেই না কী প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত ও বিপণন করলে তা নিরাপদ হবে। কিন্তু ঠিকই প্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানা করছে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম