Logo
Logo
×

অন্যান্য

বিদ্যুতের বকেয়া ১৬ হাজার কোটি টাকা

লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছে বিপ্পা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২৭ পিএম

লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়েছে বিপ্পা

বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে লুটপাটের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) নেতারা। একইসঙ্গে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদকদের এ সংগঠন। এছাড়া ট্যারিফ পর্যালোচনা করতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিপ্পা আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন বিপ্পার সাবেক সভাপতি ও কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম। আর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কেএম রেজাউল হাসনাত।

সংবাদ সম্মেলনে বিপ্পা সভাপতি বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বকেয়া ১০ হাজার কোটি টাকা। আর অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীতে বকেয়া ৫/৬ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, আমাদের বিল সাধারণত ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকলেও পিডিবি সেটা করছে না। এর ফলে আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনতে পারছি না। আর ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন সর্বনিম্ন ৪০ দিন সময় প্রয়োজন হয়। এখন বিল পাওয়া না গেলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো সম্ভব হবে না। যে কারণে গ্রীষ্মে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না। এর ফলে আগামী গ্রীষ্মে লোডশেডিং হতে পারে। ঘাটতি হতে পারে দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট। 

বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, সবাইকে এক ধরনের ভাবা ঠিক হবে না। কেউ কেউ করে থাকতে পারেন। আমরা অবশ্যই লুটপাটের যে অভিযোগ উঠেছে, তা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। 

এ সময় ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদানির বিদ্যুতের ওপর কোনো ট্যাক্স-ভ্যাট নেই। তেলের ওপর ১৫ শতাংশের বেশি ট্যাক্স-ভ্যাট রয়েছে। আদানির ট্যাক্স না থাকার পরেও ইউনিটপ্রতি দাম পড়ছে ১৭ টাকা ২০ পয়সা। আর তেলের ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়েও ইউনিটপ্রতি খরচ হয় ১৭ টাকা ০৬ পয়সা। তেলের ট্যাক্স বাদ দিলে খরচ আরও কমে আসবে।

তিনি বলেন, আদানির সঙ্গে চুক্তি করার আগে তৎকালীন সরকার সুকৌশলে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর চেয়ে কম বলে প্রচার চালায়। এটা নিয়ে আমরা বহুবার সরকারের বিভিন্ন ফোরামে বলেছি।

সম্প্রতি বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলোর ট্যারিফ পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বিপ্পা সভাপতি বলেন, এটা করা হবে আমরা আগে থেকেই জানি। এটা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরাও চাই পর্যালোচনা হোক। সরকার প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে পর্যালোচনা করবে। 

বিপ্পার সাবেক সভাপতি ও কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম উল্লে­খ করেন, চলতি বছর পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আর বছরে ৬ শতাংশ চাহিদা প্রবৃদ্ধি ধরা হলে চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ পিক আওয়ারে (বিকাল চারটা থেকে রাত ১০টা) নবায়নযোগ্য কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। ফলে চাহিদা মেটাতে হলে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ গ্যাস সংকট বিদ্যমান। পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতার উৎপাদন করতে পারে না।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের শেষ থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমুল্যায়নের কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া পিডিবির বিদ্যুতের বিল দেরিতে দেওয়ার কারণে ব্যাংকের ঋণের সুদ বাবদ দিতে হয়েছে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা। এটাও লোকসান। বেসরকারি খাতের অনেক কোম্পানির মূলধন এখন ঋণাত্মক হয়ে গেছে। ব্যাংকও বিশ্বাস করতে চাইছে না। এজন্য আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করতে।

তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনই উদ্যোগ না নিলে সামনে সেচ মৌসুমে কৃষিতে সমস্যা হবে। এতে করে খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। কারণ গেল বছর বন্যার কারণে খাদ্য উৎপাদন কমেছে। এবার সেচের জন্য পুনরায় খাদ্য উৎপাদন কমলে দেশের খাদ্যে ঘাটতি তৈরি হতে পারে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম