‘বিদেশি শক্তি রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব বিপন্ন করছে’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব বিপন্ন করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকুক তা তারা চায় না।
বুধবার রাষ্ট্র ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ সংগঠনের আয়োজনে ‘২৪ গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ও জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ভারত বিরোধিতা ও যুক্তরাষ্ট্রঘেঁষা রাজনীতি নিয়ে অধ্যাপক আবুল কাসেম বলেন, একদল বুদ্ধিজীবী আছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থক এবং তারাই এখন প্রবলভাবে ভারতের বিরোধিতা করছেন। আমাদের বাস্তবতার মধ্যে থাকতে হবে। ভারত চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে আছে। উগ্র ভারত বিরোধিতায় রাষ্ট্রীয় জীবনের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে যুদ্ধবাজ প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এখন কোনো দেশ দখল করে না। তারা দুর্বল দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা বলেন- এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এসব কথা কি তারা ভারত, শ্রীলংকা, ভিয়েতনামে গিয়ে বলতে পারবে? সেই বিবেচনায় বলছি- যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ হয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধিতা কখনো সফল হবে না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য আমরা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে তাই বলে, আমরা সব সময় ভারতের অনুগত থাকব না। স্বাধীন সত্তা নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখব।
দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় হতাশা প্রকাশ করে প্রবীণ চিন্তাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম বলেন বলেন, রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতের বাইরে চলে গেছে। এটাই এখন দেশের মৌলিক সমস্যা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুর পাশাপাশি আইন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, ছোটখাটো চুরি-ডাকাতির ঘটনার বিচার হচ্ছে বটে। কিন্তু রাজনৈতিক মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির আদেশ মেনে রায় দিচ্ছেন আদালত। যদি এখনো এ অবস্থা থেকে যায়, তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। বাহাত্তরের সংবিধান সম্পূর্ণ বাতিল নাকি কিছু ধারা সংশোধন করা হবে-এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি না করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা সংশোধন করা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আবুল কাসেম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। তবে আমরা তো তাদের সাফল্য দেখতে চাই। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরম্ভ করে দিয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা করি। উপদেষ্টাদের তাই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাষ্ট্র ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক গোলাম সরোয়ার মিলন, আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান, সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ প্রমুখ।