আতশবাজি ও ফানুসের কারণে বায়ুদূষণ বেড়েছে
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ পিএম
![আতশবাজি ও ফানুসের কারণে বায়ুদূষণ বেড়েছে](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/12/27/Untitled-7-67617e27db68b-676e84d8dc5e6.jpg)
ফাইল ছবি
২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত সাত বছরে নববর্ষ উদযাপনের কারণে বায়ুদূষণ বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এই ৭ বছরে সর্বোচ্চ দূষণ হয়েছে ২০১৭-১৮ সালে। ওই বছর দূষণ বেড়েছে ৬৬%, সর্বনিম্ন দূষণ ছিল ২০২২-২৩ সালে ৬%। এজন্য দূষণ বন্ধে সব ধরনের আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়।
শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে ক্যাপসের গবেষণা দল গত ৭ বছর (২০১৭-২০২৪) যাবত ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বায়ু ও শব্দ দূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, ২০১৮-১৯ সালে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস ওড়ানোর কারণে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ শতাংশ। ওই বছরে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগ পর্যন্ত বায়ুমান সূচক ছিল ১৯৫। রাত ১২টার পর ১ জানুয়ারিতে বায়ুমান সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ২৪০। একইভাবে ২০১৯-২০ সালে দূষণ বেড়েছে ৩৭%, ২০২০-২২ সালে দূষণ বেড়েছে ৭%। তবে করোনার সময় ২০২১-২২ সালে ২৪% দূষণ কমে। সে সময় ২০২১ সালে রাত ১২টার আগে বাতাসে বায়ুর মান ছিল ২২৭, রাত ১২টার বায়ুর মান দেখা গেছে ১৭২।গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বরে বায়ুমান সূচক ছিল গড়ে ২২০, রাত ১২টার পর ১ জানুয়ারিতে বায়ুমান সূচক হয় গড়ে ২৫৯।
আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২৪ এই সময়ের মধ্যে বায়ুমান সূচক কখনোই ভালো অবস্থানে ছিল না। বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে ভালো বায়ু বলা হয়। সেক্ষেত্রে গত ৭ বছরে নির্দিষ্ট দুই দিনে (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি) কখনোই বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে ছিল না।
সর্বশেষ দুই বছরের পরিস্থিতি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নববর্ষে রাত ১১-১২টার তুলনায় পরবর্তী ১ ঘণ্টার বায়ুদূষণের পরিমাণ প্রায় ৯১ মাইক্রোগ্রাম (৩৬%) বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ২০২৪ সালের নববর্ষে রাত ১১-১২টার তুলনায় পরবর্তী ১ ঘণ্টার বায়ুদূষণের পরিমাণ প্রায় ৬৪ মাইক্রোগ্রাম (৩৫%) বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ গত ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় বায়ুদূষণ হার ও দূষকের ঘনত্বের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দূষণের কারণে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। ৮০-৯০ ডেসিবেলের শব্দ দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের শ্রবণশক্তি নষ্ট করতে পারে।উচ্চ শব্দের কারণে অনিদ্রা, মানসিক চাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আতশবাজি এবং পটকার কারণে পাখিরা আতঙ্কিত হয়ে উড়ে যায়। প্রায়ই গাছে বা ভবনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তারা আহত হয় বা মারা যায়। ২০২৪ সালের নববর্ষে হাজারো পাখি আহত হয়েছিল।
এই দূষণ রোধে ৬ সুপারিশ করেছে ক্যাপস। সেগুলো হলো- ১. দূষণ সৃষ্টিকারী আতশবাজি ও ফানুসের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। ২. আতশবাজি এবং ফানুসের পরিবর্তে আলোকসজ্জা, প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করা এবং সীমিত শব্দে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা যেতে পারে। ৩. গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে। ৪. শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ৫. নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ৬. দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে।