নিপসমের বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশার প্রাকৃতিক শত্রু সংরক্ষণ জরুরি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ পিএম
ডেঙ্গুসহ নানা ধরনের মশাবাহিত রোগে বিগত এক দশক ধরে দেশের সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। মশা নির্মূলে বিভিন্ন সময় সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন সুফল মিলছে না। তবে প্রকৃতিতে বিদ্যমান মশার শত্রু যেমন- ড্রাগন ফ্লাইয়ের নিম্ফ (লার্ভা) কপপিড (মশাখাদক এক ধরনের পোকা), গাপ্পি মাছ ও ব্যাঙসহ বেশকিছু ক্ষুদ্র প্রাণির প্রধান খাদ্য হলো মশা। তাই সব ধরনের মশা নির্মূলে প্রাকৃতিকভাবে এসব কীটপতঙ্গ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে মশার বংশবিস্তার রোধে জৈবিক দমনে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমাতে জোর দিতে হবে।
এক্ষেত্রে মশার প্রাকৃতিক শত্রু হিসেবে পরিচিত কীটপতঙ্গ সংরক্ষণ ও বংশবিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক রাসায়নিক, পরিবেশবান্ধব বিটিআই ‘বেসিলাস থ্রুয়েনজেনেসিস ইজরায়েলেনসিস’ ও উলবাকিয়া ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে মশা নির্মূল সহজ হবে।
রোববার রাজধানীর মহাখালীর নিপসম মিলনায়তনে ‘লঙ্গিচুডিন্যাল সিনারিও অব এডিস মসকিউটো ইন ঢাকা সিটি অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড টু প্রিভেন্ট ইটস্ কনসিকোয়েন্সেস’ শীর্ষক সাইন্টিফিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারটির আয়োজন করে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম)। নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ে আলোচনা করেন প্রতিষ্ঠানটির এন্টোমলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার।
তিনি বলেন, মশার ঘনত্ব জরিপে যেসব ইনডেক্স (নির্দেশক) ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্রুটো ইনডেক্স বা বিআই। বিআই’র মান ২০-এর উপরে হলেই মশার ঘনত্ব বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে ধরা হয়। সেখানে চলতি বছর বর্ষাপূর্ব জরিপে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টিতে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতে বিআই ২০-এর উপরে। একইভাবে এ বছর বর্ষাকালীন জরিপে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২১টিতে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতেই বিআই ২০-এর উপরে।যেখানে ২০২৩ সালে বর্ষাপূর্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টিতে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতেই বিআই ২০ এর... ছিল।
একইভাবে ২০২৩ সালের বর্ষাকালীন জরিপে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টিতে বিআই ২০ এর উপরে। এমনকি ছরতি বর্ষাকালীন জরিপে বিআই’র সর্বোচ্চ মান দেখা গেছে ৭০, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এভাবে চলতে থাকলে সারা দেশে বছরব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু চলতে থাকবে।
সেমিনারে সব ধরনের মশা নির্মূলে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- জনসাধারণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা। মানদণ্ড অনুসারে ন্যূনতম রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার। মশার প্রাকৃতিক শত্রুর সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিকরণ। আইপিভিএম’র যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ। দেশে উন্নত টেকনোলজি সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি স্থাপনসহ উন্নতমানের গবেষণা নিশ্চিত করা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাতীয় স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ২০২৪-২০৩০ এর যথাযথ বাস্তবায়ন করা।
সেমিনারে কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক ডা. নিলুফার ইয়াসমিন নিলি ও ডা. দিলখুশ জাহান যৌথভাবে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় নিপসমের সব অনুষদ, এমপিএইচ ও এমফিল ফেলোরা অংশগ্রহণ করেন।