শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বদিউল আলম মজুমদার
স্বৈরাচারী ব্যবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পিএম

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, একটি স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশে যেন না ঘটে সেজন্য নির্বাচনব্যবস্থায় কতগুলো পরিবর্তন আনতে হবে। কী কী পরিবর্তন আনতে হবে সেগুলো নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের কথা বলতে হবে। কারণ তরুণরা রক্তের বিনিময়ে একটি বিপ্লব এনেছে। তাই তারা কী ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থা চায়? নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিটি তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, জেসমিন টুলী, মো. আব্দুল আলীম, মীর নাদিয়া নিভিন, মোহাম্মদ সাদেক ফেরদৌস। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি নির্বাচন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কাঠামো, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করাসহ নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা তুলে ধরে তারা। এছাড়া প্রবাসীদের ভোট দেওয়া ব্যবস্থা করা, রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রধানকে সরকার প্রধান না করা, রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করা, না ভোটের বিধান চালু করা, একজনের দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করা ও সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করার ওপর গুরুত্ব দেন।
বিগত সময়ে হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন ও দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা নষ্ট করায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে গত ৩টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলেও দাবি তোলা হয়। তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই পুনর্বাসন বা নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না। তারা আরও হুঁশিয়ারি দেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের আগে নির্বাচন হলে, তারা নির্বাচন ভবন ভাঙচুর করবেন। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ফ্যাসিবাদী কাঠামো তৈরি করে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে দেশের রাজনীতি পরিবারতন্ত্রের বাইরে নিয়ে আসতে হবে এবং দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। তা হলে বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না।
শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবগুলো গভীরভাবে বিবেচনা করার কথা জানিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দায়িত্ব সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পৌঁছে দেওয়া। সেই প্রস্তাব সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা নির্ভুল করা কঠিন। তবে নির্ভুল ভোটার তালিকা করার জন্য চেষ্টা করা হবে। অনেক নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনে যারা অপরাধ করবে, সেই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আগামীতে কোনো সরকারকে আর ফ্যাসিস্ট হতে দেব না আমরা। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের তরুণদের সজাগ থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যে যেন কেউ ফাটল ধরাতে না পারে।