১৩০ একর জমি দখল করেছেন সাবেক আইজিপি নূর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
২০০৮ সালে ক্ষমতার জোরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মানিকখালী গ্রামের বৃদ্ধ নুরুল আমিনের ১৩০ একর জমি দখল করে নিয়েছেন পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ও সংসদ-সদস্য নূর মোহাম্মদ এবং তার সহযোগীরা। ওই দখলের বিরুদ্ধে নুরুল আমিন মামলা করলেও আইজিপির দাপটে ওই মামলা তিনি চালাতে পারেননি। একপর্যায়ে জমির শোকে ওই বৃদ্ধ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন প্রয়াত নুরুল আমিনের ছেলে বদরুল আমিন। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীর ছোট ছেলে সিরাজুল আমিন ও স্ত্রী হাসনা আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে নুরুল আমিনের বড় ছেলে বদরুল আমিন বলেন, আমার বাবা মৃত নুরুল আমিনের প্রায় ১৩০ একর জমি সাবেক আইজিপি ও আওয়ামী লীগের সংসদ-সদস্য নূর মোহাম্মদ ক্ষমতায় থাকার সময় প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ বাহিনীসহ তার ভাগিনা মুন ও শাওনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন অস্ত্রধারীর মাধ্যমে ২০০৮ সালে দখল করে নেন। আমার বাবা পরে পদক্ষেপ নিলে সাবেক আইজিপি প্রভাব খাটান এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ওই ঘটনায় রাজধানীর লালমাটিয়ার ভাড়া বাসা থেকে আমার বাবাকে পুলিশ একাধিকবার তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়-ভীতি এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে জীবন রক্ষার্থে আমার বাবাকে একপর্যায়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। দেশে ফিরলেই তার ওপর অত্যাচারের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে যার ফলে পরে ২০১০ সালে তিনি আমেরিকায় চলে যান। ২০১১ সালে নূর মোহাম্মদ আইজিপির পদ হতে অবসরে গেলে আমার বাবা আবার দেশে ফিরে আসেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে আমার বাবা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমার মৎস্য প্রকল্প ও জমি দখল মুক্ত করার আবেদন করেন। কিন্তু তাতেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এখনও আমাদের জমি সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের দখলে রয়েছে। এই প্রকল্পের জমি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ঢাকা কার্যালয় থেকে তদন্ত হয়েছে। দুদক প্রমাণও পেয়েছে। ২০১০ সাল থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে দুদকের মাধ্যমে আইজিপি নূর মোহাম্মদের দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে এবং আমাদের এই মৎস্য প্রকল্প ও জমি তদন্তের ১ নাম্বারে রয়েছে।
২০১৬ সালে আমার বাবা বাদী হয়ে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দাবি করলে সহকারী জজ আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু তা তোয়াক্কা না করে প্রজেক্ট থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালি ও গাছ বিক্রি করেছেন। একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত ইটের ভাটা ও অবৈধভাবে লিজসহ নানা কার্যক্রম তারা আমাদের এই প্রজেক্টে চালাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, জমির শোক এবং অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে ২০১৮ সালে আমার বাবা মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তী সময়ে আইজিপি আমাদের পরিবারের ওপর নানা মানসিক চাপ তৈরি করেন। ২০১৮ সালের একতরফা নির্বাচনে রাতের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। যার ফলে আমাদের পরিবারকে জীবন শঙ্কায় গ্রামের বাড়ি যাওয়া হতে বিরত থাকতে হয়।
এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, আমাদের এই জমি দখলের ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন সময়ে দরবার সালিশের আয়োজন করলে সাবেক আইজিপি সেখানে অংশগ্রহণ করতেন না। আমরা বিভিন্ন সময় প্রজেক্টে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশসহ তার ভাগনে মুন, বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত গুলি চালায়। সে ঘটনায় অনেকে আহতও হয়েছেন।