Logo
Logo
×

অন্যান্য

মুনডাস্ট কাজে লাগিয়ে চাঁদে বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০১ এএম

মুনডাস্ট কাজে লাগিয়ে চাঁদে বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা

মানুষ চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখছে।  তবে নির্মাণ ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পৃথিবী থেকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া বাস্তবসম্মত নয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বার্লিনের গবেষকরা চাঁদের ধূলিকণা কাজে লাগিয়ে কাচ ও ইট তৈরি করার পদ্ধতি পরীক্ষা করছেন।

এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে চাঁদের উপকরণ থেকে স্থায়ী ও টেকসই নির্মাণ সামগ্রী তৈরি করা, যা মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয়। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এ গবেষণার ফলাফল চাঁদে মানব বসতি স্থাপনকে আরও বাস্তবসম্মত করবে।

এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রো. এনরিকো স্টল বলেন, ‘অনেক সংস্থা সত্যি চাঁদে মালপত্র সরবরাহ করতে চায়। চাঁদে এক কিলো মাল পাঠানোর জন্য তারা দশ লাখ ইউরো মাসুল চাইছে।’

পৃথিবীর বুকে চাঁদের ধূলিকণার মতো পদার্থ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় বেজাল্ট এবং ফেল্ডস্পারের মতো উপকরণ আগ্নেয়গিরির কাছে পাওয়া যায়। তবে সেগুলি যতটা সম্ভব শুকনা হতে হবে৷

এক ভ্যাকুয়াম চেম্বারের মধ্যে ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করলে সেই উপকরণ অনেকটা লাভার মতো রূপ নেয়। গলানো সেই পদার্থের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিমন স্টাপারফেন্ড বলেন, ‘এর বিশেষত্ব হলো, এর আগে কেউ এমনটা করেনি। আমরাই প্রথম ভ্যাকুয়ামের মধ্যে সেটা করতে পেরেছি। এটা সত্যি বড় সাফল্য। প্রাথমিক স্তরে আমরা বাসস্থান, অর্থাৎ, বাড়িঘর, সোলার সেলের কাঠামো ইত্যাদি গড়ে তুলতে চাই। তবে এর কোনো সীমা নেই।’

মুনডাস্ট আরও দানাদার। পৃথিবীর মতো সেই ধূলিকণা তত মিহি নয়। বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুলিয়ান বাশ বলেন, ‘আমাদের হাতে দুটি মৌলিক উপাদান রয়েছে, অর্থাৎ, বেসাল্টিক উপাদান এবং অ্যানোর্টোসাইট উপাদান। কিন্তু দুইয়ের মিশ্রণে চাঁদের জন্য উপযুক্ত নির্দিষ্ট বেস সৃষ্টি করা যায়।’

মুনডাস্টের মধ্যে একেবারেই কোনো পানি নেই। তা সত্ত্বেও দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেটি দিয়ে ইট তৈরি করা সম্ভব। বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেফান লিংকে বলেন, ‘যে চুলায় সেই ইট উৎপাদন করা হবে, সেটি আমাদের পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে হবে। এমন ওভেনের ওজন সম্ভবত ১০০ কিলোর মতো হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, সেটি কত টন উপাদান প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন করতে পারবে।’

চাঁদের বুকে জ্বালানি উৎপাদনও অন্তত কাগজেকলমে সম্ভব। সেখানে সূর্যের আলো বেশ প্রখর, আকাশে কোনো মেঘ নেই। ফলে সোলার সেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। বার্লিনের ছাত্ররা ইটের পাশাপাশি কাঁচও সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন। সেই কাচের মধ্য দিয়ে যতটা সম্ভব আলো চলাচল জরুরি।

সেটিকে তখন সোলার সেলে রূপান্তরিত করা যাবে। পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই কাজ চলছে। কাচ যতটা সম্ভব চিকন ও স্বচ্ছ হতে হবে। সেখানকার পদার্থবিদ ফেলিক্স লাং বলেন, ‘আমরা মুনগ্লাসের উপর পেরোভস্কাইট সোলার সেল তৈরি করতে চাই। অর্থাৎ সেখানেই উপাদান গলিয়ে কাচ উৎপাদন করা হবে এবং তার উপর শুধু এক মাইক্রো-মাইক্রোমিটার পেরোভস্কাইট স্তর বসানো হবে।’

পেরোভস্কাইট এমন এক কৃত্রিম স্ফটিকের মতো উপাদান, যা একটি দ্রাবকের মধ্যে দ্রবীভূত করা যেতে পারে। কোনো ভ্যাকুয়াম চেম্বারে সেটিকে কাচের উপর সমানভাবে স্প্রে করাও সম্ভব। তারপর আরো কম তাপমাত্রায় তামাও প্রয়োগ করা হবে। প্রচলিত সিলিকনের তুলনায় পেরোভস্কাইটের অনেক সুবিধা রয়েছে। ফেলিক্স লাং বলেন, ‘মহাকাশে মহাজাগতিক রশ্মি প্রতিবারই একটি পরমাণুকে তার অবস্থান থেকে ছিটকে বার করে দেয়। সেটা আসলে একটা ত্রুটি। এর ফলে সোলার সেল বিকল হয়ে যায়। পেরোভস্কাইট এতই নরম, যে একটি পরমাণু ছিটকে বেরিয়ে গেলেও আবার সেটি আগের অবস্থানে ফিরে আসে। ফলে মহাকাশে কয়েক দশক ধরে এর কার্যকারিতা অটুট থাকে।’

চূড়ান্ত সোলার সেল দুটি কাচের প্লেট দিয়ে তৈরি, যার মধ্যে পেরোভস্কাইটের একটা স্তর রয়েছে। এবার সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার পালা। ভ্যাকুয়ামের মধ্যে সেই সোলার সেল কৃত্রিম সূর্যের দিকে তাক করা হলো। কয়েক মূহূর্ত পর সেটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করল। পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ফেলিক্স লাং বলেন, ‘আমরা এক কিলো পেরোভস্কাইট চাঁদে নিয়ে যেতে পারলে, সেটা দিয়ে ৪০০ বর্গ মিটার বড় স্তর সৃষ্টি করা যাবে, যা তিনটি ভলিবল কোর্টের সমান। সেখানে ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।’

চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পদার্পণের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর মানুষ আরো বড় স্বপ্ন দেখছে। তারা চাঁদে বসবাস করতে চায়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম