আলোচনা সভায় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে এন্টিবায়োটিক ঢুকে রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
পোল্ট্রি মুরগিসহ বিভিন্ন খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে এন্টিবায়োটিক প্রবেশ করছে। যার ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। তাদেরকে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাছাড়া কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আমরা হয়তো কিছু ধান উৎপাদন বাড়াতে পেরেছি। কিন্তু অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে হাওর ও জলাশয়ের মাছ নিধন হয়ে হচ্ছে।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থান কৃষি, কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
ফরিদা আখতার নিজ মন্ত্রণালয়ের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ডিমের কথা যদি আপনি বলেন তাহলে পোল্ট্রি ফার্ম। মুরগি এখন পোল্ট্রি হয়ে গেছে। এ কারণে মুরগি আর খাবার খায় না। তাকে ফিড খাওয়াতে হয়। এই ফিড আমেরিকা-ব্রাজিল থেকে আমদানি হয়ে আসে। যেগুলো ‘জেনিটিক্যালি মডিফাইড’।এগুলোতে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে তারা। এসব ব্যবহারের কারণে যে পরিমাণ এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে এবং আপনারা যদি কোনো হাসপাতালে অসুখ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান, তাহলে দেখবেন একটা-দুইটা-তিনটা এন্টিবায়োটিক দিয়ে কোনো কাজ করছে না। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতদের দেখতে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে এবং পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করার পর বলছে, অনেকের ৮-৯টি এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। ওদেরকে চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ভূমিদস্যু হাটাও ভূমিহীন বাঁচাও’- এটা যে কতটা প্রয়োজনীয় আন্দোলন, সেটা আমি এই মন্ত্রণালয়ে এসে জেলেদের জন্য কিছু কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি। সব জলাশয়গুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। মৎস্যজীবী ও জেলেরা উৎখাত হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ভূমিগুলো দখল হয়ে যাওয়ার কারণে। তারা যে জীবিকা নির্বাহ করবে তার কোনো সুযোগ নেই। এই (ভূমিহীন) আন্দোলনটি আমাদের হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমার খুব অবাক লাগে আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ছিল। তখন একসঙ্গে কাজ করা যেত। এখন ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। আগে আধুনিক কৃষিতে দেদারছে কীটনাশক ও হাইব্রিড ব্যবহারের কারণে তারা হয়তো ধানের উৎপাদন কিছুটা বাড়াতে পেরেছে, বা দেখাচ্ছে। কিন্তু মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে শুধু কীটনাশক ব্যবহারের কারণে। হাওড়ে মাছ নেই। অথচ হাওর রীতিমতো মাছের আধার। এখানে শুধু মাছ নয়, চরাঞ্চলগুলো আমাদের গবাদি পশুর জায়গা, এখানে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এগুলো কিছু করা যাচ্ছে না। কাজেই কৃষিতে সংস্কার না আনতে পারলে আমি এখানে কাজ করতে পারব না।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- এএল আরডির নির্বাহী শামসুল আলম, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী জাকির হোসেন, শহীদুল আলম ও দিদারুল ভূইয়া প্রমুখ।