Logo
Logo
×

অন্যান্য

সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক

দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩২ এএম

দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে

দুর্গাপূজাকে ঘিরে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে একটি মহল চক্রান্ত করছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে দেশে যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে তা ধ্বংস করতে ওই মহল সক্রিয়।

যারা আনসার বাহিনীর মাধ্যমে বিদ্রোহ সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছিল, পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল, কলকারখানায় অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছিল, তারা এখন নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজিবি সদর দপ্তরের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু সংখ্যালঘু কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে চেয়েছিলেন। ওই চক্রটি অনেক মানুষকে ভয় দেখিয়ে সীমান্তের ওপারে নেওয়ার চেষ্টা করে। 

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্তে বিজিবি শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরও কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থক ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি পালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা কীভাবে, কোন সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছেন সে বিষয়ে আমারও প্রশ্ন আছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, দেশের ভেতরে অবস্থান করেই পালানোর আওয়াজ দেওয়া হয়। যারা পালিয়েছেন বলে উলে­খ করা হচ্ছে, তাদের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। অবৈধভাবে দেশ থেকে পালানোর ঘটনায় বিজিবির দায় আছে। শুধু কি বিজিবিই দায়বদ্ধ? কোন সীমান্ত দিয়ে কে পালিয়ে গেছেন তা অবশ্যই তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বিজিবি প্রধান বলেন, ৫ আগস্ট বিকাল থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল, কিছু প্রভাবশালী ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন। তারা যাতে পালাতে না পারেন সেজন্য আমরা তাদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় পাঠিয়ে দেই। ভারতে পলায়নের সময় এ পর্যন্ত যে ২২ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি তাদের মধ্যে চারজন হলেন উচ্চপদস্থ।

তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের চার হাজার ২০০ কিলোমিটার সীমান্ত। পুরো সীমান্ত শিল্ড করে দেওয়া বা সশরীরে সার্বক্ষণিক গার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে পলায়ন সম্ভব। অনেক টাকার বিনিময়ে দালালরা কাজ করে বলে তথ্য রয়েছে। আমরা দালালদের বলেছি, যারা পালাতে চায় তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে দ্বিগুণ টাকা দেব। রাউজানের এমপিকে দালালসহ ধরেছি। 

আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। তাই ভারতে পালিয়ে গিয়েও তারা রক্ষা পাবেন না। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে বন্দি বিনিময় চুক্তিকে কাজে লাগানো হবে।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অন্দোলনে বিজিবির তিনজন সদস্য নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন র‌্যাবে ডেপুটেশনে ছিলেন। ১০৩ জন বিজিবি সদস্যের বেশিরভাগই আহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে। বিজিবির হাতে যেন একটি প্রাণও না যায় আমরা সেই চেষ্টা চালিয়েছি। আন্দোলন দমাতে পুলিশ যে ধরনের কাজ করেছে, আমাদেরও সে ধরনের কাজ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা করিনি। অনেক কিছুই টেকনিক্যালি এড়িয়ে গেছি। এজন্য আমাকে জবাবদিহিও করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা সরাসরি নাকচ করার সুযোগ ছিল না। যদি তা করতাম তাহলে, সংশ্লিষ্ট মিটিং শেষে আমার অফিসে ফেরার নিশ্চয়তা থাকত না। 

জুলাই-আগস্টের অন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ আগস্ট ঢাকার ১৪টি প্রবেশ মুখে বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা ৮০-৯০ জন সদস্য মোতায়েন করি। সকাল ৯টা-১০টার দিকে প্রবেশপথগুলোর খবর নিয়ে দেখলাম, প্রত্যেকটি প্রবেশপথ দিয়ে হাজার হাজার লোক ঢাকায় আসছেন। তখন আমি প্রবেশপথগুলো থেকে বিজিবি প্রত্যাহার করে নিই। 

বিজিবির ডিজি বলেন, ৬ আগস্ট থেকে যে স্ক্রল দেখেছেন, সীমান্ত পথে পালানো রোধে বিজিবিকে সহায়তা করুন, এই নির্দেশনা কেউ বিজিবিকে দেয়নি। নিজ উদ্যোগে করেছি। তখন থেকে আমরা চেষ্টা করছি। তথ্য দেওয়ার যেসব সংস্থা আছে তারাও যদি তথ্য দেন তাহলে কাজটা সহজ হয়। কেউ কেউ আÍগোপনে আছেন।

মাদক ব্যবসায়ী বদিকে ধরার জন্য বেশকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। শোনা গেল তিনি ট্রলারে মিয়ানমার গেছেন। কিন্তু গ্রেফতার হলেন সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) থেকে। এরকম একদিকে যাওয়ার আওয়াজ দিয়ে অন্য দিক থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন অনেকে। 

সাংবাদিকদের প্রতি আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছেও তথ্য থাকে। বিজিবিকে জানান, আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা পালানো রোধে বদ্ধপরিকর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা করা ও বাধা দেওয়ার অভিযোগে তালিকাভুক্ত ২২ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে বিজিবি। 

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বলে একটি টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হয়েছে। তিনি কীভাবে, কোন সীমান্ত দিয়ে গেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বিষয়টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমান্ত রক্ষার প্রশ্নে বিএসএফকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। সীমান্ত রক্ষার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। বিএসএফকে আমরা কোনো ধরনের ছাড়Ñযেটা নিয়মনীতির বাইরে, আমরা দেব না এটুকু আশ্বাস দিতে চাই।

প্রবল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর কি সীমান্তে ভারতের মনোভাব বদলেছে?

এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিজি আশরাফুজ্জামান বলেন, যেসব মাইনোরিটি আছেন, তারা চলে যেতে পারেন প্রথম থেকে এ ধরনের একটি অপপ্রচার ছিল। তখন আমরা দেখতে পেয়েছি, বিএসএফ তাদের ক্যাম্পগুলোতে জনবল বাড়িয়েছে, তারা অত্যন্ত সতর্কাবস্থায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী আসার কথা নয়, দূরে থাকার কথা, সেসব জায়গায় সেনাবাহিনীর মুভমেন্ট আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ওই সময়গুলোতে।

এসব বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের জানিয়েছে, এ তথ্য সঠিক নয়। তবে পরে ডিজি পর্যায়ে যে মিটিং হবে, বিষয়টি আবারও তোলা হবে। সার্বিকভাবে দেখতে পাচ্ছি তারা তাদের প্রহরা বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বাড়িয়েছে। আমাদের এদিকে অনেক কিছু খেয়াল করার চেষ্টা করছে।

দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, সীমান্তের আট কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় দুই হাজার পূজামণ্ডপ রয়েছে। এগুলো রেকি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। বিজিবির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম