‘নারীর প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রাখার সুযোগ নেই’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ এএম
আন্তর্জাতিক বৈষম্য বিরোধী কনভেনশন (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, CEDAW) দিবস পালনোপলক্ষে বুধবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভাকক্ষে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সিডও সনদের সংরক্ষণ-প্রত্যাহার, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্তরায় এবং উত্তরণের উপায়, নারী ও শিশুর প্রতি ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে লক্ষ্যনির্ভর আলোচনা হয়। পাশাপাশি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলপ্রসূতায় নারীর প্রতি বৈষম্য নিরোধে কোটার যৌক্তিকতা নিয়েও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বেসরকারি নারী অধিকার সংস্থার উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় আলোচকরা বৈষম্য বিলোপ করে নারী অধিকার নিশ্চিতকরণের বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ প্রদান করেন। আলোচনা ও পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও সব অংশীদারদের অংশগ্রহণে বৃহৎ পরিসরে কর্মশালা অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের জাতিসংঘ সনদে (সিডও) ১৯৮৪ স্বাক্ষর করলে বিগত চল্লিশ বছরে সরকার কর্তৃক এর সব বিধান আজও পর্যন্ত পুরোপুরি অনুমোদন করা হয়নি। ধারা-২ এবং ধারা ১৬.১ (গ) বিষয়ে বাংলাদেশের আপত্তি রয়েছে অথচ এই দুটি ধারাতেই বৈষম্য বিলোপের মূল বিষয় রয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন না করা দেশের সংবিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি বলে বক্তারা মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে আলোচকগণ ধারা দুটি অনুমোদন ও বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ও যৌক্তিক পদক্ষেপ আলোচনা করেন এবং বৈষম্য নিরসনপূর্বক আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণে গুরুত্বারোপ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল ভোগ করতে নারীর অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ যৌক্তিকভাবে কোটা বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। আলোচকরা নারী ও শিশুর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ে কমিশনের শক্তিশালী অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিডওর গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দুটি ধারা বাংলাদেশ এখনো সংরক্ষণে রেখেছে যা বাস্তবায়ন করতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বাধা অতিক্রম করতে হবে। বাংলাদেশের এ অবস্থান সিডওর মূল চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমাদের সমাজকে অগ্রগতির ও প্রগতির পথে প্রস্তুত করতে হবে যাতে নারীর সামাজিক, ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা যায়। আমাদের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতকরণের যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানের সুযোগ নেই। পাশাপাশি, সিডও কমিটির কাছে প্রতি ৪ বছরে প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও নিয়মিত তা পাঠানো হয় না। এ প্রতিবেদন যথাসময়ে পাঠনোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
চেয়ারম্যান কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময় ভিত্তিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন কৌশলপত্র প্রণয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। সব অংশীজনের অংশগ্রহণে প্রস্তুতকৃত খসড়া কৌশলপত্র পর্যালোচনার জন্য কর্মশালা আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত সভায় গৃহীত হয়। তথ্য ও উপাত্ত সংশ্লেষ এবং মূল্যায়ন, নিরীক্ষণ ও রূপায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা কর্মের প্রয়োজনে নারী অধিকার সংগঠনগুলোকে পারস্পরিক ভূমিকা রাখার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি, সভায় অংশগ্রহণকারীগণ সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিয়মিত সিডও প্রতিবেদন পেশ করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সকলে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সম্মানিত সদস্য ড. তানিয়া হক।
আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন লইয়ার্স এসোসিয়েশন, সম্পর্কের নয়া সেতু ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।