ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
ধীর ধীরে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি ধীরগতিতে কমছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টায় সাতটি নদীর ১৪টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বেলা ৩টায় তা কমে দাঁড়ায় ১২টি পয়েন্টে। ওই ১২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও আগের দিনের তুলনায় কম ছিল।
চট্টগ্রামের হালদা নদীর নারায়ণহাট পয়েন্টে সর্বোচ্চ ৯০ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে। পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারি বৃষ্টিপাত না হলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতির দিকে যাবে। আপাতত ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাসও নেই। এদিকে নোয়াখালী ও ফেনীর বন্যা আক্রান্ত কয়েকজন জানান, বন্যার পানি আগের চেয়ে কিছুটা স্বচ্ছ দেখা যাচ্ছে, যা পানির তীব্রতা কমার অন্যতম লক্ষণ।
সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানান- কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় সমীন্তবর্তী অঞ্চল এবং ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশের ভেতরে বৃহস্পতিবার থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়নি। ভারতের নদ-নদীগুলোতেও পানির সমতল কমতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে। তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা নেই। আগামী দুদিন ওইসব নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ করতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল কুমার রায় শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, এদিন সার্বিক পানি প্রবাহ ও বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারি বা অতি ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি। ভারি বৃষ্টিপাত না হলে ধীরে ধীরে পানি সমতল হ্রাস পেতে থাকবে। এতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, বন্যায় দেশের ১১ জেলায় ৭৭ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ৫৮৪টি পৌরসভা ও ইউনিয়নের ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১৩ জন মারা গেছেন। দেশের বন্যা প্লাবিত জেলা ১১টি। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা ৩টায় কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, গোমতী, হালদা, মহুরী ও ফেনী নদীর ১২টি স্টেশনে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। যদিও তা আগের দিনের চেয়ে কম।
এর আগে সকাল ৯টার প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের কুশিয়ারা নদীর অমরশীদ ও শেওলা, সুনামগঞ্জের মারকুলী, মৌলভীবাজার জেলার মনু নদীর মৌলভীবাজার ও রেলওয়ে ব্রিজ, হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর বাল্লা ও হবিগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের ফেনী নদীর রামগড় স্টেশনে পানি প্রবাহ কমেছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের হালদা নদীর নারায়ণহাট ও পাপুকুরিয়া, কুমিল্লার গোমতী নদীর কুমিল্লা ও দেবিদ্বার স্টেশনে পানির প্রবাহ বেড়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে দেশের কয়েক জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে ভারি বা অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ভারি বৃষ্টিও হতে পারে। শুক্রবার রাজশাহীর ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ ১৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।