Logo
Logo
×

অন্যান্য

সরকাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মোমেন্টামকে কাজে লাগাতে চেয়েছে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১০:১৭ এএম

সরকাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মোমেন্টামকে কাজে লাগাতে চেয়েছে

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে রাজধানীসহ সারা দেশে সহিংসতা ও নাশকতা করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। নির্বিচারে হামলা করেছে পুলিশ, র্যাব-আনসার ও বিজিবি সদস্যদের ওপর। তাদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ। গত বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার টানা তিন দিন ঢাকাসহ সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে জ্বলেছে— বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবন, সেতুভবন, বনশ্রীর পিবিআই কার্যালয়, মহাখালী ডাটা সেন্টার, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভবন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন, মিরপুর ফুটওভার ব্রিজ, ফিলিং স্টেশন, নারায়ণগঞ্জ আনসার ক্যাম্প, ওয়াসা ভবন, নরসিংদীর মাধবী থানা, কিশোরগঞ্জে ট্রেনের বগিসহ বহু সরকারি-বেসরকারি ভবন। তারা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি শত শত পরিবহণ। শুধু শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়িতে অবস্থিত শীতল পরিবহণের ডিপোতে রাখা ২৬টি বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

এ ছাড়া ঢাকার মেট্রোরেল স্টেশন, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, বগুড়া, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে বিনা উসকানিতে এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা। এ হামলার সুযোগে আট শতাধিক কয়েদি কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্টভাবে বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ঢাকাসহ সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। এদের শক্তভাবে দমন করা হবে। তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন আর ছাত্রদের হাতে নেই। এ আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দেশে নাশকতা, সহিংসতা ও তাণ্ডব চালিয়েছে।

এদিকে নাশকতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আন্দোলনকে ঘিরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা স্বাভাবিক সূত্রে মেলাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কোন কোন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের একাংশ। তারা জানিয়েছেন, অতীতের অন্দোলনে কয়েক হাজার ছাত্রের মধ্যে একজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু কোনো সমস্যা হয়নি। এবার আন্দোলনের শুরুতে পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। তার পরও পুলিশের ওপর নৃশংস হামলা এবং ব্যাপক নাশকতা ঘটেছে। এর পেছনে রয়েছে দেশি-বিদেশি শক্তিশালী হাত। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, কোটা সংস্কারের বিষয়টি মাসের পর মাস আদালতে ফেলে রাখা ঠিক হয়নি। শুরুতে আন্দোলনকারীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা উচিত হয়নি। সরকারের একাধিক মন্ত্রীর অতিকথনে ভুল বার্তা তৈরি হয়েছিল। সরকার যখন আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়েছিল, তখন আন্দোলন আর ছাত্রদের হাতে ছিল না।

ব্যাপক নাশকতার বিষয়ে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ছাত্রদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে ছিল, তখন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মোমেন্টামকে কাজে লাগাতে চেয়েছে। তারা নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচার করেছে যে, এত বড় মোমেন্টাম আর পাওয়া যাবে না। তারা সবস্তরেই মোমেন্টামকে কাজে লাগাতে চেয়েছে। সুযোগ সন্ধানীরা ধাপে ধাপে আন্দোলনকারীদের মাঝে ঢুকেছে। শুরুতে খাবার ও পানি দিয়ে সহায়তা করেছে। পরে টাকা-পয়সা ছড়িয়েছে। মমতাময়ী মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন কোনো কোনো নেত্রী।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি খাতে লোকজন নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এক হয়ে কাজ করায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি ঘটে। আন্দোলনে ছাত্র ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও যুক্ত হয়েছিলেন। নানা কারণে ট্রাফিক পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ থাকায় যানবাহন চালকরাও রাস্তায় নেমেছিলেন। থানা পুলিশের প্রতি ক্ষোভ থেকে রাস্তায় নেমেছিলেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও। প্রলোভন দেখিয়ে আন্দোলনে নামানো হয়েছিল বস্তিবাসীসহ নিম্নআয়ের মানুষদের। বিহারিদের আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন বিদেশিরাও। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে— আন্দোলনে যুক্ত ছিল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের একাংশও। কারণ তারা স্থানীয় পর্যায়ে বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা কোনো পদপদবি পাচ্ছিলেন না। নানা কারণে তারা ছিলেন বঞ্চিত অবস্থায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ যুগান্তরকে জানিয়েছেন, নাশকতায় কার কী ভূমিকা ছিল সবই আমরা বের করেছি। যার যতটুকু অপরাধ তাকে ততটুকু শাস্তি ভোগ করতে হবে। যারা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি চায় না, তারাই আন্দোলনের নামে নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা সবাইকেই একে একে আইনের আওতায় আনব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম