ডিও লেটারের অনুসন্ধানে নেমে বেরিয়ে এলো ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর চাঞ্চল্যকর তথ্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান তার মালিকানাধীন একটি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ডিও লেটার দিয়েছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে।সেই ডিও লেটারের তথ্য তালাশ করতে গিয়ে যুগান্তরের তিন মাসের অনুসন্ধানে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।সরকারি খাসজমি দলিল করে মালিকানা নিয়েছেন তিনি।
প্রায় ২৬ বছর আগে চাঞ্চল্যকর এ দলিল সম্পাদনের পর জমি নিজের নামে নামজারিও করে নিয়েছেন মহিববুর রহমান। দিচ্ছেন খাজনাও। অথচ আলোচ্য দলিলে যে দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করে বিক্রি দেখানো হয়েছে, এর প্রায় অর্ধেক জমিই পর্যটন করপোরেশন খাস সম্পত্তি হিসাবে অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। আর বাস্তবে জমি না থাকলেও গোপনে দলিল করা হয়েছে ডিসির খতিয়ানে থাকা এই জমি। এমনকি আলোচ্য দলিলের একটি দাগে ৪২ শতক জমির কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা উপকূলে।
তথ্যানুসন্ধান বলছে, আলোচিত ওই দলিলে উল্লেখ করা ২ একরের মধ্যে এক একর ২০ শতক জমির তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুয়াকাটার ওই আসন থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন মো. মহিববুর রহমান। এরপর ৭ দিনের মাথায় খাস খতিয়ানের ওই জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। পরবর্তী সময়ে কুয়াকাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এই দখলের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করে। ২০১৯ সালের ১৯ মে মো. মহিববুর রহমানসহ দুজনকে ২০১৮ সালের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি দখল ও নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন আদালত। এই নির্দেশ অমান্য করেই ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অনধিকার প্রবেশ করে পাউবোর জমিতে মো. মহিববুর রহমান ৫টি পিলার স্থাপন করেন। এ অবস্থায় তাদের অবস্থান ধরে রাখতে মো. মহিববুর রহমানসহ দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে ‘আদালত অবমাননা’ মামলা করে পাউবো।
এদিকে স্থিতাবস্থা বহাল রাখার আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। শুনানি শেষে আপিল গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর পাউবোর বিরুদ্ধে রায় ও আদেশ প্রদান করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে পাউবো হাইকোর্টে রিট করে। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাউবোর পক্ষে রায় ও আদেশ প্রদান করা হয়। এভাবে পালটাপালটি আপিল দায়েরের পর পাউবোর রেকর্ড সংশোধনের মামলা নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ অবস্থার মধ্যেই প্রতিমন্ত্রীর নজিরবিহীন এই ডিও লেটার দেওয়া হয়।
তাহলে এ জমির দলিল হলো কীভাবে-জানতে চাইলে কলাপাড়া ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, আসলে প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানের দলিল নিয়েই রাষ্ট্রীয় তদন্ত হওয়া উচিত। কীভাবে দলিলদাতা জমির মালিক হয়েছেন, তা তদন্ত হলেই আসল রহস্য বের হয়ে আসবে।
নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পাউবো পটুয়াখালীর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানসহ দুজনের বিরুদ্ধে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। তখন তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার কেনা দাগে সরকারের খাস খতিয়ানের কোনো জমি নেই। একই দলিলে অপর আরও দুজন আছেন। তাদের একজন কুতুবউদ্দিন তালুকদার, অপরজন আনিছুর রহমান। এ দুজনের জমি পর্যটন করপোরেশন অধিগ্রহণ করেছে।