বেনজীরকে আইনি ‘বেনিফিট’ দিতে কৌশলী অবস্থানে দুদকের কেউ কেউ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদের খবর বের হওয়ায় তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে তাকে আইনি ‘বেনিফিট’ দিতে কৌশলী অবস্থানে হাঁটছেন দুদকের কেউ কেউ।
সূত্রে জানা গেছে, বেনজীর যাতে আদালতে আইনি ‘বেনিফিট’ নিতে পারেন এজন্য কৌশলী অবস্থানে হাঁটছে দুদকের কেউ কেউ। সময়ক্ষেপণ না করে কমিশনের এসব কর্মকর্তা দ্রুত সরাসরি মামলা দায়েরের পক্ষে মত দিচ্ছেন। কিন্তু প্রাথমিক অনুসন্ধানে কারও অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেলে দুদক আইনের ২৬(১) ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারির বিধান রয়েছে। সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় যদি কেউ মিথ্যা তথ্য দেয় কিংবা তথ্য গোপন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ২৬(২) অনুযায়ী মামলা করা হয়। এই মামলার মেরিট শক্ত হয়। আর সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি না করে সরাসরি কারও বিরুদ্ধে ২৭(১) ধারায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের মামলা করলে তিনি আদালতে আইনি সুবিধা পান। বেনজীরের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করলে তিনি আদালতে বলতে পারেন, দুদক তার সম্পদ বিবরণী চাইলে আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ সম্পদের তথ্য দাখিল করতেন। তার সম্পদ যে বৈধ আয়ে কেনা সেটা তিনি প্রমাণ করতে পারতেন। কিন্তু দুদক তাকে সেই সুযোগ না দেওয়ায় তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তখন আদালতের রায় বেনজীরের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
বেনজীরের বিরুদ্ধে চলমান অনুসন্ধান প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে যুগান্তর থেকে যোগাযোগ করা হয়। এতে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে দুদক যে তৎপরতা দেখিয়েছিল, তখনই আমাদের এবং দেশবাসীর মনেও প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। প্রশ্নটা ছিল এমন, যিনি পুলিশ ও র্যাবের প্রধান ছিলেন, রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী, তাকে কি বাস্তবেই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। নাকি কোনো ধরনের সমঝোতার অংশ হিসাবে এটা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় হচ্ছে, অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার শুরুতে তার বিরুদ্ধে যে তৎপরতা দেখানো হয়েছিল, ক্রমাগত তা স্তিমিত হয়ে আসছে। এ প্রক্রিয়ার মধ্যেই তার দেশত্যাগের ঘটনা ঘটে। কাজেই পুরো বিষয়টা এক ধরনের ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান-এ কথা মাথায় রেখে কোনো দিক থেকে প্রভাবিত না হয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে এ প্রত্যাশা সব সময়ই কঠিন ছিল। এখনো কঠিন রয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।