Logo
Logo
×

অন্যান্য

‘ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, দর-কষাকষি তত দুর্বল হবে’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ১০:৫৬ পিএম

‘ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, দর-কষাকষি তত দুর্বল হবে’

‘ভারতের ওপর রাজনৈতিক নির্ভরতার কারণে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের পরিবেশ, কৃষি ও অর্থনীতি সংকটে পড়ছে। পানি না পেয়ে দেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। অন্যদিকে তিস্তায় যে প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে তার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে দর-কষাকষির অবস্থান তত দুর্বল হবে।’

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত পানিবণ্টন: অভিজ্ঞতা, আশঙ্কা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। রোববার সকালে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়।

ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক আলী রীয়াজ, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। 

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান। সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘ভারতের ওপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক নির্ভরতা রয়েছে। যার কারণে পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।’

‘নদ-নদীর পানি শুকিয়ে ফেলতে পারলে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে ফেলা সম্ভব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশ অস্তিত্ব-সংকটে পড়ছে।’

‘ভারত একটি নদীকে আরেকটি নদীর সঙ্গে যুক্ত করে পানি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে’ উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ হবে। ভারতের একটি রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্ন করতে পারে যে, পানি যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাবে? কিন্তু এমন প্রশ্ন বাংলাদেশ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

ওয়েবিনারে অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে দর-কষাকষির অবস্থান তত দুর্বল হবে।’

তিনি বলেন, ‘পানির ব্যাপারে রাজনৈতিক মহল খুব-একটা সোচ্চার নয়। তারা (রাজনীতিবিদরা) ভারতের কাছে কাঁচা মরিচের জন্য আবেদন করেন, পেঁয়াজের জন্য আবেদন করেন, পানির জন্য আবেদন করেন কি?’

পানি নিয়ে কাজ করা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতো সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো সেই ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করে’ দিতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মূল বক্তব্যে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘২০১১ সালে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হতে গিয়েও পরে আর হয়নি। তখন বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য সেই চুক্তি হয়নি। কিন্তু ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায়। তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কারণে।’

‘গঙ্গা পানি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায়নি’ বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। ‘যৌথ নদী কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে সংশয়’ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘২০২৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। সেটি নবায়ন করতে হবে। না থাকার চেয়ে দুর্বল চুক্তি থাকাও ভালো।’

অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ পানি পাওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে ৪৩ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশ পানি কম পেয়েছে বাংলাদেশ।’

ওয়েবিনারে প্রত্যেক বক্তাই ‘তিস্তা প্রকল্পে কী থাকছে তার বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি’ বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম