Logo
Logo
×

অন্যান্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজয় মিছিলে গুলি, ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ১১:০৩ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজয় মিছিলে গুলি, ছাত্রলীগ কর্মী নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর আনন্দ মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়াশ রহমান এজাজ (২৩) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার খান টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত এজাজ কলেজপাড়ার আমিন মিয়ার ছেলে। এদিন বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে চতুর্থ ও শেষ ধাপে ৬০ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

বরিশাল, ভোলা, মাগুরার মহম্মদপুর ও বাগেরহাটের শরণখোলায় সহিংসতায় দুই গুলিবিদ্ধসহ ৪২ জন আহত হয়েছেন। ভৈরবে একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। নেত্রকোনার কেন্দুয়াসহ পাঁচ উপজেলায় জালভোট দেওয়ার তথ্য পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এসব ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্তত ২১ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। ৯ জনকে তাৎক্ষণিক বিচার করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

এ নির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। শেষ ধাপে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর তিনি বলেন, আমরা খুবই সন্তুষ্ট নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনো রকম সহিংসতা হয়নি, মেজর কোনো ইনসিডেন্ট হয়নি।

চার ধাপে ৪৪২টি উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে। যদিও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে স্থগিত ২২ উপজেলায় ৯ জুন ভোট হবে। শেষ ধাপেও কম ভোট পড়েছে। সিইসি জানান, এ ধাপে ৫ হাজার ১৪৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৮৯টি কেন্দ্রের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। যদিও ভোটগ্রহণ শুরুর প্রথম ৪ ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়ার কথা জানিয়েছিলেন ইসি সচিব শফিউল আজিম।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন ভবনে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। কোনো রকম মেজর সহিংসতা হয়নি। রাজনৈতিক বিষয়গুলো আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারব না। তিনি আরও বলেন, সহিংসতার কথা যদি বলি ধাওয়া-পালটাধাওয়ার কারণে খুব মাইনর সংখ্যক আহত হয়েছেন। এর বাইরে বরিশালে পাঁচজন আহত হয়েছেন। ওখানে একটু কোপাকুপি হয়েছে। খুব গুরুতর নয়। তবে মাইনরের চেয়ে একটু বেশি। নেত্রকোনার কেন্দুয়াতে একজন প্রিসাইডিং অফিসার নিজেই ব্যালট পেপারে সিল মারছিলেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টোটাল জাল ভোটের ইনসিডেন্ট ঘটেছে পাঁচটি। ইভিএমে যেখানে ভোট হয়েছে, সেখানে কোনো ইনসিডেন্ট হয়নি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টায় শহরের মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শোভন বিজয়ী হওয়ার তার সমর্থকরা বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজপাড়া এলাকার খান টাওয়ারের সামনে এলে প্রতিপক্ষের লোকজন গুলি ছোড়ে। এতে ছাত্রলীগের কর্মী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আয়াশ রহমান এজাজ মাথায় গুলিবিদ্ধ মাটিতে পড়ে যান। মিছিলের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ঢাকায় স্থানান্তর করেন। ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে।

একাধিক সূত্র জানায়, জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়ের সঙ্গে এজাজের বিরোধ ছিল। সকালে ভোটকেন্দ্রে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। সন্ধ্যায় বিজয় মিছিল চলাকালে জয় এজাজকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।

নিহতের মামাতো ভাই জুনায়েদ চৌধুরী জানান, উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রার্থীর সমর্থক ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল উদ্দিন খোকার অনুসারী হাসান আল ফারাবী জয়। বিজয় মিছিল চলাকালে খোকার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ে তারা।

ভোলা : লালমোহনে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে প্রকাশ্যে গালাগাল ও মারধর করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ফরাশগঞ্জ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দিদার মসজিদের সামনে বুধবার দুপুরে গণসংযোগ করছিলেন চেয়ারম্যানের প্রার্থী লায়ন হাসনাত হাছনাইন। এ সময় শালিক প্রতীকের প্রধান সমন্বয়কারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম হাওলাদার সেখানে এসে গর্জে ওঠেন। তিনি বলেন, নিষেধ উপেক্ষা করে কেন জনসংযোগ করতে এলি। বলেই হাছনাইনকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন এবং গলা টিপে ধরেন। এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, তিনি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন।

মহম্মদপুর (মাগুরা) : বিনোদপুর ইউনিয়নের ঘুল্লিয়া গ্রামে বিজয়ী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ৫টি দোকান লুটপাট হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছয় রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধরা হলেনÑফায়জুর খান ও বাবু মোল্যা। অপর আহতদের মধ্যে রয়েছেনÑনাজিম খান, আজাহের শিকদার, মাসুদ খান, জিবরিল খান, মতিয়ার মাস্টার, রাসেল মোল্যা, আকিদুল ও নিজাম।

শরণখোলা (বাগেরহাট) : সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা বাজারে মঙ্গলবার রাত ৮টায় দুপক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। আনারস প্রতীকের প্রার্থী রায়হান উদ্দিন আকন শান্ত এবং দোয়াত-কলম প্রতীকের আসাদুজ্জামান মিলনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। আহতরা হলেন- প্রার্থী রায়হান উদ্দিন আকন শান্ত এবং তার কর্মী টুলু তালুকদার, ইমরান উদ্দিন শুভ, খান মতিয়ার রহমান, আলমগীর শিকদার, ওবায়দুল আকন ও ময়নুল ইসলাম। এছাড়াও আহত হয়েছেন দোয়াত কলমের সমর্থক আসাদ কবিরাজ, মাসুম তালুকদার, শাহিন গাজী, মাহাবুব মোল্লা, মেহেদি হাসান ও জলিল হাওলাদার।

বগুড়া : তিন উপজেলায় নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ধুনটে তিনজন, শেরপুরে ৮ জন ও নন্দীগ্রামে ৯ জন। নন্দীগ্রামে তিন কেন্দ্র থেকে নয়জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাতজনকে ১০ দিন করে ও আচরণবিধি ম্যাজিস্ট্রেট দুজনকে ৩ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) : মৌকরা ইউপির তিলিপ দারুসসুন্নাত সালেহীয়া দ্বীনিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার অপরাধে ৩ জনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারা হলেন- নুর আহমদ ভূঁইয়ার ছেলে মীর হোসেন, আবদুস ছাত্তারের ছেলে মাহফুজুর রহমান ও মীর হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম।

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : ব্যালট বক্স ছিনতাইকে কেন্দ্র করে মৌটুপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় রকিব ও রাকিবুল নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এনামুল হক সোহান বলেন, দুপক্ষের হট্টগোলের একপর্যায়ে একটি পক্ষ কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে ব্যালট বক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে ব্যালট বক্সের লকার ভেঙে যায়।

ফেনী ও ছাগলনাইয়া : বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার সময় ১১ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া ৫৭টি সিল মারা ব্যালট বাতিল করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : ৪নং বেতদীঘি ইউনিয়নের চৌরাইট মহেষপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টায় সুলতান মোল্লা (৪০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে।

বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : দুটি কেন্দ্রে চার পোলিং এজেন্টকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তারা হলেন- কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মুকট প্রতীকের পোলিং এজেন্ট মামুন ও প্রজাপ্রতি প্রতীকের এজেন্ট সহিদ মিয়া। ছতরপুর উচ্চ বিদ্যালয় মহিলা ভোটকেন্দ্রে মুকট প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হারুন মিয়া ও হাঁস প্রতীকের শাহানা বেগম। এছাড়া জাল ভোট দিতে আসা মো. কাওসার মিয়া নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

জকিগঞ্জ (সিলেট) : জাল ভোট প্রদানের সময় হাজী তৈয়ব আলী মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে একজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : হেমনগর ইউনিয়নের খামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামকে জাল ভোট দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে তাকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম