ইসি-টিআইবির বৈঠক
একাধিক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৪, ০১:১৪ এএম
নির্বাচনি ব্যবস্থায় পরিবর্তন বা নতুন করে ঢেলে সাজাতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) প্রস্তাব দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এরই অংশ হিসাবে একাধিক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কথা বলেছে সংস্থাটি। নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা আরোপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোববার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এসব প্রস্তাব দিয়েছে টিআইবি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, বর্তমান কমিশনের বিদায়ের আগে পরবর্তী কমিশনের জন্য রেখে যাওয়া প্রতিবেদনে একাধিক দিনে ভোটগ্রহণের সুপারিশ করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সদিচ্ছা দরকার বলেও মনে করেন সিইসি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কখনো একা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না, যদি রাষ্ট্র এবং সরকারের পলিটিক্যাল উইল সপক্ষে না থাকে। সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈরিতা অত্যন্ত প্রকট। এত প্রকট বৈরিতা নিয়ে সামনে আগানো কঠিন হবে। এ বৈরিতা পরিহার করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন ভবনে রোববার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে টিআইবির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। অপরদিকে সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও অতিরিক্ত সচিব অংশ নেন। বৈঠকে চলমান উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনকে দেয় টিআইবি। পরে বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে সিইসি ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের তথ্যগুলো দ্রুত প্রকাশ ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ চেয়েছে। টিআইবি বলেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করিনি। সেক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আইনি সীমাবদ্ধতা আছে।
নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, সব ক্ষেত্রে অনেক স্বচ্ছতা চেয়েছে টিআইবি। তারা বলেছে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। তবে সুন্দর ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া উচিত। সব দলের অংশগ্রহণ থাকা দরকার, সেটা হয়নি। আমরা বলেছি, আমাদের কাজ নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করা। আমরা বলেছি, সমস্যা অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনৈতিক সমস্যাগুলো নিরসন না হলে নির্বাচনব্যবস্থা স্থিতিশীল হবে না।
একাধিক দিনে সংসদ নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, আমাদের কাছে মনে হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনটা যদি স্ক্যাটার্ড (একাধিক দিনে ভোটগ্রহণ) করা যায়, তাহলে ম্যানেজমেন্টটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। ভোটকেন্দ্রগুলোয় অধিক সংখ্যক ফোর্সেস মোবিলাইজ করা যাবে। মনিটরিংটা সহজ হবে। অধিক সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দিতে পারব। নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা উলেখ করে সিইসি দাবি করেন, যতটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা করি। আমাদের অনন্ত সক্ষমতা আছে, সেটা মোটেই না। ইলেকশন কমিশন একা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না, যদি রাষ্ট্র এবং সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকে।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থায় পরিবর্তন বা পুরোপুরি ঢেলে সাজানো দরকার। এর একটি পদ্ধতি হতে পারে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব প্রণয়নের। ইসিও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছে এটির আরও চাহিদা সৃষ্টি করা দরকার। এ বিষয়ে পরে সিইসি বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিয়ে টিআইবি গবেষণা করতে পারে। এ গবেষণা আমরা করতে পারব না।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ওই নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হয়েছে। আর তা ক্ষমতাসীন দলের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসিও একমত পোষণ করেছে। তারা জানিয়েছে, যতটুকু সক্ষমতা ছিল সে অনুযায়ী কাজ করেছে। তিনি বলেন, আমরা উভয় পক্ষই (টিআইবি ও ইসি) নির্বাচনকালীন সরকার কর্তৃক নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিশেষ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বাস্তবায়নে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়নি বলে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছি।
নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচন যে সরকারের অধীনে হয়েছিল, সে পদ্ধতিতে ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। কিন্তু যেটা সম্ভব নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা প্রণয়নের। বিশ্বের অনেক দেশেই এটা রয়েছে। ইসি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোরই ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা যদি না চায়, যদি মনে করে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নির্বাচন করবে তবে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম সমস্যা অথবা এটাতেই সমাধান- আমরা এর কোনোটিই মনে করি না। ইভিএম-এর বর্তমান পদ্ধতিতে ঘাটতি রয়েছে। আমরা ইভিএমে পেপার ট্রেইল যুক্তের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ইসি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি হলে পেপার ট্রেইল করা কোনো বিষয় না বলে জানিয়েছে।
ইভিএম বিষয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম ভিপি প্যাডযুক্ত করলে যদি আস্থা ফিরে আসে, সেটা একটা ভালো উপায়। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য পোষণ করলে ইভিএমে ভিপি প্যাড সংযুক্ত করা যায়।