মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার বিষয়ে যা বলল সিএমএইচ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিরল মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া বর্তমানে সুস্থ রয়েছে।
রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাবেয়া ও রোকেয়ার অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ফলোআপের জন্য গত ২৪ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং হাঙ্গেরীয় চিকিৎসক দল ঢাকা সিএমএইচে আসেন। পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী ও হাঙ্গেরীর চিকিৎসক দল চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ওই অস্ত্রোপচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন উপস্থিত ছিলেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তারা।
সিএমএইচ জানায়, পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মাথা জোড়া লাগানো জমজ কন্যাসন্তান। যাদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ক্র্যানিওপ্যাগাস টুইনস’। মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২.৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ শিশুদের মধ্যে মাত্র একটি জোড়া মাথার শিশু জন্ম নেয়। প্রায় ৪০ শতাংশ জোড়া মাথার শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং আরও এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। আনুমানিক শতকরা ২৫ ভাগ শিশু জোড়া মাথা নিয়ে বেঁচে থাকে যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এর সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই বিরল অস্ত্রোপচারটি প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী ঢাকার সিএমএইচে সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বে ১৭তম।
সিএমএইচ জানায়, অস্ত্রপচারের সবচেয়ে জটিল অংশ ‘জমজ মস্তিষ্ক’ আলাদাকরণের কাজটি সম্পন্নের জন্য ২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাবেয়া ও রোকেয়া ঢাকার সিএমএইচে আসে। পুনরায় ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং একই বছরের ১৩ মার্চ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটব্যাপী দুটি অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এ অস্ত্রোপচার দুটির মাধ্যমে তাদের মাথায় বিদ্যমান ক্ষতস্থান নতুন কোষ দ্বারা পূর্ণ করা হয়। পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাবেয়ার মাথার বাম দিকের চামড়ার ক্ষত শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে চামড়ার নিচে লাগানো কৃত্রিম মাথার খুলি দৃশ্যমান হয়। এই জটিলতা সমাধানের নিমিত্তে বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ২০২২ সালের ৭ মার্চ ‘ক্র্যানিওপ্লাস্টি সার্জারি’ এর মাধ্যমে একটি সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রোকেয়া ও রাবেয়া দুজনই সুস্থ আছে। অস্ত্রোপচারে দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকসহ শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।