কুসংস্কারের শিকার হয় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৮ পিএম
যক্ষ্মা রোগী ও তাদের পরিবার নানাভাবে সামাজিক কুসংস্কারে (স্টিগমা) প্রভাবিত হয়ে থাকে। এসব কুসংস্কার তাদের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকেও বাধাগ্রস্ত করছে বলে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, প্রায় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের চিকিৎসা গ্রহণ ও সেবাচক্রের প্রথম তিনটি পর্যায়ে স্টিগমা বা কুসংস্কারে প্রভাব অনুভব করেন।
মহাখালীর আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে যক্ষ্মাসম্পর্কিত স্টিগমার অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশে আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে সেমিনারে বলা হয়, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের প্রায় ২২ শতাংশ সদস্য স্টিগমার সম্মুখীন হন। আর ১৪ ভাগ যক্ষ্মারোগী ও তাদের পরিবারের ১১ ভাগ সদস্য বাড়িতেও স্টিগমা অনুধাবন করেন। এমনকি স্টিগমাকে প্রায়ই এমন একটি সামাজিক আচরণ হিসাবে দেখা হয়, যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়। অপমানজনক ও নেতিবাচক আচরণের শিকার হন তারা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে সামাজিক কুসংস্কার বা স্টিগমার প্রভাব অনেক। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যক্ষ্মার কারণে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় পরিচালিত এই সমীক্ষায় স্টপ টিবি পার্টনারশিপের ‘টিবি স্টিগমা অ্যাসেসমেন্ট ডেটা কালেকশন টুল’ ব্যবহার করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন গত পাঁচ বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য, কমিউনিটি প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা।
গবেষণা থেকে জানা যায়, যক্ষ্মাসংক্রান্ত স্টিগমা নারীদের বেশি প্রভাবিত করে। এতে সামাজিকভাবে অসম্মান, হয়রানি ও আর্থিক অসুবিধায় পড়েন তারা। গবেষণাটি বাংলাদেশে যক্ষ্মাসংক্রান্ত স্টিগমার ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে এটিকে যক্ষ্মার সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। স্টিগমার কাঠামোগত এবং সামাজিক কারণগুলো মোকাবিলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। যার লক্ষ্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন রোগের বিষয়ে স্টিগমা সব সময়ই ছিল। এর কারণ শিক্ষার অভাবের পাশাপাশি মনমানসিকতার ওপরও নির্ভর করে। ফলে চিকিৎসকরা স্টিগমামুক্ত কি না সেটাও নিশ্চিত নয়।
স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, এক সময় মানুষ যক্ষ্মা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেত, তবে এখন দেশের যে কোনো প্রান্তে গেলেই যক্ষ্মার নাম শোনা যায়। এটা হয়েছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সফল উদ্যোগের কারণে। যক্ষ্মার কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এভাবেই যৌথভাবে কাজ করে যেতে হবে।