হাওর অঞ্চল হবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু: আবদুর রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
মৎস্য ও প্রাণীসম্পদমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেছেন, হাওর অঞ্চলের সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে হাওর অঞ্চল হবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমাদের হাওর অঞ্চলের সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে হবে।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহ গবেষণা ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত ‘হাওরের সম্ভাবনা: প্রাপ্তি ও সংকট উত্তরণের পথরেখা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘হাওর অঞ্চল হচ্ছে জীব বৈচিত্রের এক অপার আধার। হাওরকেন্দ্রিক অর্থনীতির যে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে বহুমুখী ও পরিকল্পিত উপায়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
হাওর অঞ্চলের উন্নয়নকে জাতীয় উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা গেলে শেখ হাসিনার হাত ধরে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে মাছের উৎপাদন মূলত ব্যাহত হয় স্থায়ী অভয়াশ্রমের অভাব, ক্ষতিকর চায়না জালের ব্যবহার, ডিম ওয়ালা মাছ ও পোনা নিধন, ইজারা প্রথা, সেচ দিয়ে মাছ শিকার, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং হাওরের গভীরতা কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ার কারণে।’ তিনি এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
মন্ত্রী জানান, ‘স্বাধীনতার পর হাওর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় হাওর এলাকার জনজীবন, জীবিকা, পরিবেশসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১২ সাল থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি একটি হাওর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হাওরের যেমন সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢলের কারণে মাছ চাষ ও বোরো ফসল উৎপাদন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বাহিত পলি জমে নদী ভরাট হওয়ায় নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।’
তিনি এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
আয়োজক সংগঠন বৃহত্তর ময়মনসিংহ গবেষণা ফাউন্ডেশনের সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান এমপি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ্যকুয়াকালচার বিভাগের প্রফেসর (ব্রি) ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর সুভাষ চন্দ্র দাস।
সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার ও পানি সম্পদ সচিব নাজমুল আহসান। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব সাকী আনোয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি কবি ও কপিরাইট বিশেষজ্ঞ মনজুরুর রহমান এবং সালমা মুক্তা।
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদুল হাসান এমপি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে বলেছিলেন- তিনি দেশের উন্নয়ন দেখতে চান। কিন্তু দেশকে যখন উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখন একদল কুলাঙ্গার ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। দেশ আবার পেছন দিকে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন বলেই দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। তার একজন সারথী হিসেবে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অবদান রাখার প্রয়াসেই আমাদের এই আয়োজন।’