বাংলা ফন্টে যুক্ত হলো একগুচ্ছ প্রযুক্তিসেবা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৫৯ এএম
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তিনটি সফটওয়্যার (বাংলা টেক্সট টু স্পিচ—উচ্চারণ, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট—কথা ও বাংলা ওসিআর-বর্ণ), একটি বাংলা ফন্ট (পূর্ণ), বিটিসিএলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট জিপনের দুটি (সুলভ ও ভাষা) ইন্টারনেট সেবা প্যাকেজ ও টেলিটকের ই-সিম উদ্বোধন করা হয়েছে।
বুধবার আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে এই সেবাগুলো উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযাগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রদর্শনীতে নিজেদের ভাষায় ভাষাকে ভালোবাসার কথা শোনায় দেশের ৪০টি নৃগোষ্ঠী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উচ্চারণ হচ্ছে বাংলা টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যার কম্পিউটারে বা ওয়েবসাইটের লেখা উচ্চারণ করে পড়ে দেয়। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বাংলা লেখা পড়ার জন্য সফটওয়্যার। এটি ব্যবহারের ওয়েব অ্যাড্রেস www.voice.bangla.gov.bd; কথা হচ্ছে কম্পিউটারে বাংলায় কথা বলে লেখা বা রেকর্ডেড অডিও ট্রানস্ক্রিপশনের সফটওয়্যার। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরি ভয়েস টাইটিং ও সাবটাইটেল তৈরির জন্য শক্তিশালী অ্যাপ্লিকেশন। এটি ব্যবহারের ওয়েব অ্যাড্রেস www.read.bangla.gov.bd; বর্ণ হচ্ছে ছবি থেকে লেখায় রূপান্তরের সফটওয়্যার। www.ocr.bangla.gov.bd—এই ওয়েবসাইটে বর্ণ ব্যবহার করা যাবে; পূর্ণ ফন্ট একটি অনন্য সাধারণ বাংলা ইউনিকোড ফন্ট; যা ফন্ট-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা প্রকাশনায় প্রয়োজনীয় সব টাইপোগ্রাফিক ফিচার। একই সঙ্গে বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্যকেও যথাযথভাবে প্রকাশ করছে এই ফন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার ছাড়াও এই ফন্ট মুদ্রণকাজে এবং ওয়েবে ব্যবহার উপযোগী। ফন্টে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বিরাম চিহ্ন, ইংরেজি বর্ণ, গাণিতিক চিহ্ন, অসমীয়া স্বতন্ত্র সেট, ইন্ডিক-বাংলা সমর্থনকারী গ্লিফ, হোমোগ্রাফ, জনপ্রিয় আইকন বা লোগোসহ প্রয়োজনীয় সব গ্লিফ রয়েছে। ফন্টটি https://bangla.gov.bd/fonts/ ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, নতুন সেবার সঙ্গে গুগল জি-বোর্ডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এর অ্যাকিউরিসি রেট। উচ্চারণ, কথা, বর্ণমালা, পূর্ণ, অনুভব, ধ্বনি, গুরু—সবকিছুই বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। দেশের গবেষক ও উদ্ভাবকেরাই এসব প্রযুক্তিসেবা তৈরি করেছেন। তাঁরা নিজেদের নকশায় ১৬ ধরনের কম্পোনেন্ট ও ৪০ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করেছেন।
পলক বলেন, ‘জিপন-আধুনিক উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা গ্রামীণ প্রান্তিকে আমরা বিটিসিএলের মাধ্যমে দিতে চাই। বিটিসিএলের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ জিপনের বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজের আওতায় ৫ এমবিপিএসের বিদ্যমান মূল্যে ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন সাশ্রয়ী এই প্যাকেজের আওতায় ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ পাওয়া যাবে ৫০০ টাকায়। ১০ এমবিপিএস ইন্টারনেটের বিদ্যমান মূল্য ৮০০ টাকা। এখন থেকে ১৫ এমবিপিএস পাওয়া যাবে ৮০০ টাকায়। ১৫ এমবিপিএস বিদ্যমান মূল্য ১ হাজার ৫০ টাকা, এখন থেকে সমপরিমাণ টাকা অর্থাৎ ১ হাজার ৫০ টাকায় পাওয়া যাবে ২০ এমবিপিএস। বিদ্যমান মূল্যে ২০ এমবিপিএসের দাম ছিল ১ হাজার ২৫০ টাকা। বিদ্যমান মূল্যে ২৫ এমবিপিএসের দাম ১ হাজার ৪৫০ টাকা। ২৫ এমবিপিএসের পরিবর্তিত প্যাকেজ মূল্য ১ হাজার ৩০০ টাকা। ৩০ এমবিপিএসের বিদ্যমান মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা। পরিবর্তিত মূল্য নির্ধারিত করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ৪০ এমবিপিএসের মূল্য ২ হাজার ৫০ টাকা, পরিবর্তিত মূল্য ২ হাজার টাকা। ৫০ এমবিপিএসের বিদ্যমান মূল্য ২ হাজার ৪৫০ টাকা, পরিবর্তিত দাম রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিটিসিএল থেকে বিটিসিএলে কল ফ্রি থাকবে। ৫ থেকে ১০ এমবিপিএস হলে রাউটারটা ফ্রি দেওয়া হবে। গ্রাহক একটি রাউটার ফ্রি পাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে শুধু টেলিটক ছাড়া অন্য কোনো অপারেটরের নেটওয়ার্ক নেই, সেখানে বাধ্য হয়ে মানুষ কিনছে। টেলিটকের সেবার মান বাড়াতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বাংলালিংকের যে নেটওয়ার্ক আছে, সেই অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ার করার প্রস্তাব দিয়েছি। টেলিটক, বাংলালিংক ও বিটিআরসির প্রযুক্তিবিদেরা এটি টেস্ট করে সফল হয়েছেন। অ্যাকটিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারও টেলিটকের ব্যবহারকারীদের অল্পদিনের মধ্যে উপহার দিতে পারব। এটি হলে টেলিটকের নেটওয়ার্ক না থাকলেও বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক থাকলেই হবে। এর জন্য একটি চার্জ বিটিআরসি নির্ধারণ করে দেবে।’
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।