অজুহাতে দুই দিনে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
সরবরাহের ঘাটতির অজুহাতে রাজধানীর খুচরা বাজারে ফের পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু বাজারে কোনো সংকট নেই। পরিস্থিতি এমন, দুই দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বাড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাজারে পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। আর শুক্রবার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা। আর গত বছর একই সময় ৩০-৪০ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা হানিফ বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে বিক্রেতারা কিছু দিন পরপর কারসাজি করছে। সপ্তাহে সপ্তাহে সুযোগ পেলেই কেজিতে ২০ টাকা করে বাড়াচ্ছে। আবার তাদের মন মতো কমাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। আর আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তার বাড়তি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি যে পেঁয়াজের দাম বাড়বে। প্রত্যেকটি দোকানেই পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। ক্রেতাও তার চাহিদা মতো পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
একই বাজারের বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, পাইকারি বাজারে হঠাৎ করে গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও সরবরাহ সংকটের কথা বলে পণ্যটির দাম হু হু করে বাড়ানো হচ্ছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।
কাওরান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আওলাদ বলেন, আমদানির সবচেয়ে বড় বাজার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। আমদানি না থাকায় কয়েক মাস ধরে আগাম জাতের দেশীয় পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। ফলে দেশীয় এ পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তিনি জানান, দেশে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। বেশির ভাগ এলাকার কৃষকরা ওই পেঁয়াজ তুলে ফেলেছেন। আর হালি পেঁয়াজের ভরপুর মৌসুম শুরু হতে কিছু দিন লাগবে। তাই সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে বাজারে দাম বাড়ছে।
এদিকে আসন্ন রোজা উপলক্ষ্যে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে রমজাননির্ভর চার পণ্য- চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক ও কর কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
শুক্রবার এফডিসিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক ছায়া সংসদে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। রমজান মাসের চাহিদা বিবেচনায় ইতোমধ্যে কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। তবে ভোক্তা পর্যায়ে এর সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিংয়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রভাবশালী মহলের চাপ নেই।
তিনি বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ও সংস্থাসমূহ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। বাণিজ্য কূটনীতিকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই শ্রীলংকা বা ভেনিজুয়েলা হবে না। বর্তমানে বিশ্বে ৩৮তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। মানুষের কষ্ট দূর করতে সরকার বাজার ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ইতোমধ্যে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু হয়েছে। যা পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করবে। তিনি জানান, কেউই রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলমান থাকবে।