সরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধিতে দারিদ্র্য বেড়েছিল: বিআইডিএস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩১ পিএম
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে দেশের সরকারি কর্মচারীদের শতভাগ বেতন বৃদ্ধির জেরে বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন অনেক কর্মী সাময়িকভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। তখন শ্রমবাজারে নতুন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার সঙ্গে বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা মানিয়ে নিতে পারেননি। সেজন্য এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যদিও সেটা সরকারের উদ্দেশ্য ছিল না।
শনিবার সংস্থাটির শীতকালীন অর্থনৈতিক সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন ইফপ্রির অর্থনীতিবিদ মো. আল-হাসান।
দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে দারিদ্র্য, অসমতা ও প্রবৃদ্ধিবিষয়ক তিনটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একে এনামুল হক।
এর আগে সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যামল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অতনু রাব্বানি প্রমুখ।
রাজধানীর আগারগাঁও বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে বিআইডিএস বাংলাদেশ ইকোনমিক রিসার্চ নেটওয়ার্ক ও অ্যাসোসিয়েশন ফর ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মজুরি বেড়ে গেলে দারিদ্র্যসীমাও বেড়ে যায়। অর্থাৎ আগে যে আয় করলে মানুষকে দরিদ্র বলা হতো না, তার সীমা বেড়ে যায়। সবার মজুরি একই হারে বাড়ে না। সে জন্য এই সীমা ১০ শতাংশ বেড়ে গেলে দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যখন জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করা হয় এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব আসে, তখন সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য বেশ দ্রুততার সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। দুইভাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায় বলে দেখান তিনি। প্রথমত, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে এমন খবর আসা মাত্র দ্রুতগতিতে বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, বেতন বৃদ্ধির খবরের সঙ্গে যদি বাজেট প্রস্তাবের সময় চলে আসে, তাহলে পণ্যমূল্য আরও বেড়ে যায়। বেতন শুধু সরকারি কর্মচারীদের বাড়লেও বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের চাপ সবার ওপরেই পড়ে। কিন্তু বেসরকারি খাতের স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির হার কম বলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে সে সময় এই কর্মীদের অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গিয়েছিলেন।
এ গবেষণার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন করেন বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক আসাদুজ্জামান, বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল প্রমুখ।
প্রথম অধিবেশনের প্রথম গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিন মাসুদ আলী। ‘স্থানীয় সরকারের ইউনিট খণ্ডিত করা হলে কি দারিদ্র্য বিমোচন হয়’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ইউনিট খণ্ডিত করার কারণে দারিদ্র্যে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে গবেষণা হয়নি। সেই বাস্তবতা থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, এর ফল কী হয়। এতে দেখা যায়, স্থানীয় সরকারের ইউনিট খণ্ডিত করা হলে প্রাথমিকভাবে দারিদ্র্য কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু খণ্ডিতকরণ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে পরবর্তীকালে দারিদ্র্য আবার কিছুটা বাড়তে পারে।