রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ সময় নির্বাচনি ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার চেয়েছে জনসংহতি সমিতির নেতারা। এর ব্যত্যয় হলে পার্বত্যবাসী বিকল্প সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ২৬ বছর আগে যে শান্তিচুক্তি হয়েছিল, তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারকে দায়ী করেন জনসংহতি সমিতির নেতারা। কিন্তু জনসংহতি সমিতির অসহযোগিতার কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে অন্তরায় ঘটছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
খাগড়াছড়ি : চুক্তির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শনিবার সকালে খাগড়াছড়ির কমলছড়ি হাইস্কুল মাঠে জনসংহতি সমিতির সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতারা। এর আগে বৌদ্ধ মিশন প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে জুম্ম জনগণের শাসনতান্ত্রিক ‘রক্ষাকবচ’ বলেও মন্তব্য করেছেন জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সভাপতি বিমল চাকমা।
সমাবেশে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দেন। উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আরাধ্য পাল খীসার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেএসএসের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি শোভা কুমার চাকমা, রাঙামাটি জেলার সভাপতি বিমলেশ্বর চাকমা, রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক জুপিটার চাকমা প্রমুখ।
রাঙামাটি : চুক্তি সম্পাদনকারী সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতারা চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। শনিবার বিকালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে পাহাড়ে উন্নয়নের গতিধারা ফিরেছে। শান্তির সুবাতাস বইছে। শান্তিচুক্তির এত বছরেও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। তারা সশস্ত্র হামলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, জেলা পরিষদের প্রধান মুখ্য নির্বাহী আশরাফুল ইসলাম, সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আনোয়ার লতিফ খান, ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল এরশাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে সকালে পার্বত্য চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে গণসমাবেশের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক জুলি মং মারমা।
বান্দরবান : জেলা পরিষদের আয়োজনে বান্দরবানে জেলা প্রশাসন চত্বর থেকে শনিবার একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় মারমা, চাকমা, বম, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, খুমীসহ পাহাড়ের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ অংশ নেয়। এদিকে স্থানীয় রাজার মাঠে সেনাবাহিনীর বান্দরবান জোনের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও গরিব অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আলীকদম (বান্দরবান) : উপজেলা পরিষদ ও সেনা জোনের উদ্যোগে সম্প্রীতির মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচনা সভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়।
মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি): মাটিরাঙ্গায় বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও কম্বল বিতরণ করেছে সেনাবাহিনী। গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন ১৫ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি মাটিরাঙ্গা জোন এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) : নাইক্ষ্যংছড়িতে ১১ বিজিবির শান্তি র্যালি ও পাহাড়ি বাঙালিদের মাঝে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী এবং শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।
রামগড় (খাগড়াছড়ি) : রামগড়ে ৪৩ বিজিবির আয়োজনে শান্তি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : আগৈলঝাড়ায় র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকালে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালি বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।