বিষের বোতল-কাফনের কাপড় জড়িয়ে ফল প্রকাশের দাবি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:১৭ পিএম
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ‘পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা’ পদের চূড়ান্ত ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে হাতে বিষের বোতল ও গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে দেশের ৪৬টি জেলা থেকে আসা চাকরিপ্রার্থীরা এই বেশে মানবন্ধনে অংশ নেন। তবে অধিদপ্তর জানিয়েছে ফলাফল প্রকাশের বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে।
কুষ্টিয়া থেকে এসে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক চাকরিপ্রার্থী যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতিটি অধিদপ্তর ভাইভা নেওয়ার এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত ফল দেয়। কিন্তু আমাদের ভাইভা নেওয়ার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ফল হয়নি। এর আগে চূড়ান্ত ফলের দাবিতে চারবার মানববন্ধন করেছি। এখন আমাদের চাওয়া চাকরি হোক বা না হোক অন্তত রেজাল্টা প্রকাশ হোক।’
পঞ্চগড় থেকে আসা আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘তার সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ভালো হওয়ায় আশায় বুক বেধে আছেন। কিন্তু কবে ফল প্রকাশ করা হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলছে না। চাকরির আশায় ঢাকায় এসে একটি হোটেলে উঠেছি। আমরা ৭ হাজার ৬২১ নারী প্রার্থী চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষায়, যাদের অধিকাংশই বিবাহিত। স্বামী-সংসার ফেলে রেখে ফলের দাবিতে আর কত আন্দোলন করতে হবে আমাদের।’
চাকরিপ্রার্থীরা আরও বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন, ফলাফল তৈরি আছে। কিন্তু সরকারের ওপর মহলের আদেশ ছাড়া দিতে পারছি না। এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেব।’
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ২০২০ সালের ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এ পদটি শুধু নারী প্রার্থীদের জন্য। যাদের নিয়োগের পর ১৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠপর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, প্রজননস্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, সাধারণ রোগীসহ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা। নিয়োগপ্রক্রিয়া চার বছর ধরে আটকে আছে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হলেও চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না। এ পদের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল, চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃক শারীরিক সুস্থতা ও অন্তঃসত্ত্বা নয় মর্মে সনদ জমা দিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হবে। পরে গণমাধ্যমে চাকরির শর্তে মা হতে পারছেন না প্রার্থীরা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর অমানবিক শর্তটি বাতিল করে আদেশ জারি করে অধিদপ্তর।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ তিন বছর পর গত ফেব্রুয়ারিতে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে মোট ৪৬টি জেলায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রার্থী। এরমধ্যে ৭ হাজার ৬২১ জন মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু লিখিত পরীক্ষা নিয়ে আগের নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর নতুন নিয়োগ কমিটি গঠন করে গত ২২ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচটি ভাইভা বোর্ডের মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হচ্ছে না।