‘কিছু লোকের তালাশ পাচ্ছি না সরকারের কাছে তথ্য চেয়েছি’
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৩ পিএম
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি
দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার দিকে নজর রাখছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুনের অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে চিঠিও দিয়েছে কমিশন।
বিরোধী মতের কিছু নেতাকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, কিছু লোকের তালাশ পাচ্ছি না। সরকারের কাছে তাদের তথ্য চেয়েছি।
জেনেভায় চলমান জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চতুর্থ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) বা সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনায় বাংলাদেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি উঠে আসে। এ পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে- এমন প্রশ্নে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে এসব কথা বলেন।
সোমবার অনুষ্ঠিত সভায় পাশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচন, রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উত্থাপন করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনেক প্রশ্ন ও অভিযোগের জবাব দেন।
এদিকে দেশের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের মানাবধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনামূলক মূল্যায়ন অতীতেও হয়েছে, এবারও হলো। মানবাধিকারের এই লঙ্ঘনের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ মোটেও যথেষ্ট নয়। অতএব, আমরা যতই জোরগলায় বলি না কেন বিশ্বে আমাদের গুরুত্ব আছে, নিজেদের রোল মডেল দাবি করি না কেন- এসব সমালোচনার আলোকে বস্তুতই তা বাস্তবধর্মী না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সার্বিকভাবে বলব, সরকারের কাছে আমরা লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছি যেন সহিংসতামুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ইউপিআরে গত কয়েক বছরের পর্যালোচনা হয়েছে। বিরোধীদের গুম, খুনের বিষয়ে সরকার কোনো উত্তর দিতে পারছে না। কিছু লোক আছে, আমরা তালাশ (হদিস) পাচ্ছি না। আমরা সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছি। গুম-খুনের বিষয়ে আমাদের রিপোর্টেও উল্লেখ করেছি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চতুর্থ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) লিখিতভাবে বিবৃতি দিয়েছি। আমাদের বিবৃতিতে যেসব বিষয় সঠিক নয়, তা উল্লেখ করেছি। কিছু বিষয়ে হয়তো কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে, সেটার প্রশংসা করেছি। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি দরকার, যেখানে যেখানে সরকারের ব্যর্থতা আছে, সেটা আমরা উল্লেখ করে দিয়েছি।
ইউপিআর অধিবেশনের পরপর জাতিসংঘ দপ্তরেই কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের আয়োজনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া বাকনার আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, গত দুই সপ্তাহে ১০ হাজারের বেশি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি মৃত এবং দেশে অনুপস্থিত মানুষের নামেও ভিত্তিহীন মামলা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান আরও বলেন, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে অনেক ধরনের সহিংসতা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ৮৩টি বাস পোড়ানো, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যদি দেখি, কোনো কোনো পার্টি ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেক সময় বল প্রয়োগ করে। যেটা আমরা এরশাদের আমলেও দেখেছি। বিভিন্ন সরকার করে থাকে।