Logo
Logo
×

অন্যান্য

একজন মা হিসাবে বিশ্বনেতাদের কাছে অনুরোধ, যুদ্ধ বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রী

Icon

বাসস

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৯ পিএম

একজন মা হিসাবে বিশ্বনেতাদের কাছে অনুরোধ, যুদ্ধ বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রী

যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীজুড়ে আমরা যুদ্ধের দামামা দেখছি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলার মধ্যেই ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের হামলা। যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করে নারী ও শিশু। একজন নারী রাজনীতিক বা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নয়, একজন মা হিসাবে বিশ্বনেতাদের কাছে অনুরোধ করব আপনারা এ যুদ্ধ বন্ধ করেন। বন্ধ করেন অস্ত্রের খেলা এবং অস্ত্রের প্রতিযোগিতা।’ 

মঙ্গলবার গণভবনে জয়িতা টাওয়ার উদ্বোধন-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেন্ডার সমতার কথা বলে অনেক দেশ। বাংলাদেশে কিন্তু এর উলটো হয়ে গেছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি স্কুলে যায়, ফলাফলেও ভালো করে। খেলাধুলায়ও নারীরা ভালো করছে। প্রাইমারি ও মাধ্যমিকে খেলাধুলা চলছে, এখানে মেয়েরা যাতে আরও সম্পৃক্ত হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘শুধু অধিকার অধিকার বলে চিল্লালে হবে না। অধিকার হবে তখনই, যখন নারী ১০ টাকা নিয়ে ঘরে ঢুকতে পারবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পারলেই মেয়েদের কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। এটা আমার বাবার কথা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি, ধর্ষণ ও অ্যাসিড নিক্ষেপের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে সুরক্ষা দিয়েছি। নারী নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দিতেও আইন করে দিয়েছি। সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবার সঙ্গে মায়েরও পরিচয় নিশ্চিত করেছি। এছাড়া দরিদ্র মা, বয়স্ক নারী, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যাতে তাদের জীবনটা অর্থবহ হয়। এই বাজেটে ৪৩টা মন্ত্রণালয়ে নারীবান্ধব বাজেট দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা সবক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আমরা নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরই সেখানে নারীর যে অধিকারের কথা ছিল, সব বাতিল করে দেন। কারণ, তিনি জামায়াতে ইসলামকে নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। ফলে তাদের ২০ দলীয় জোট নারীদের অধিকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর পুনরায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আবারও নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মেয়েরা প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে যাবে। তাদের ওসি, এসপি করেছি। বিচারকও বানিয়েছি। এসপি পদায়নের সময় অনেকে এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন, কিন্তু আমি তা শুনিনি। আমাদের প্রতিটি জায়গায় নারীদের আসন ও পদ সংরক্ষিত আছে, রেখেছি।

নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলে আজকের এত উন্নয়ন করতে পেরেছি। নারীদেরসহ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’

দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রভাব ও যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতিতে চাপ পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। জাহাজের ভাড়া বেড়ে গেছে। এজন্য ভাইবোনদের আহ্বান করি, যার যেখানে সুযোগ আছে, নিজেরা যেন চাষ করি। নিজেরা আবাদ করলে নিজের চাহিদা পূরণ করতে পারব।’ 

তিনি বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা জয়িতা ফাউন্ডেশন করেছি। নারীদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার করেছি। গণভবনের মাটি আজ ধন্য এজন্য যে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দক্ষ ও সফল নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জয়িতা ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড এবং নবনির্মিত জয়িতা টাওয়ারের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। 

এর আগে সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ২৭ (পুরাতন) সড়কে নবনির্মিত জয়িতা ১২তলা আইকনিক টাওয়ার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বিঘা জমির ওপর নির্মিত বহুতল জয়িতা আইকনিক টাওয়ারে চাইল্ড ডে-কেয়ার সেন্টার, ডিজাইন সেন্টার, বিউটি পার্লার, মহিলাদের জন্য জিমনেশিয়াম, মহিলা ও শিশুদের জন্য সুইমিংপুল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, ব্যাংক, ফুড কোর্ট ও ক্যাফে রয়েছে। এছাড়া ই-জয়িতা অনলাইন মার্কেটপ্লেস চালুু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর জয়িতা টাওয়ার নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

এর আগে ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে জয়িতা ফাউন্ডেশনের জন্য সরকার নামমাত্র মূল্যে দেশের প্রতিটি বিভাগে এক বিঘা করে জমি বরাদ্দ দিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম