১৫ বছরে দেশে সম্পদ ও ভোগের বৈষম্য বেড়েছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২৫ পিএম
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যানে এটা প্রকাশ্য সত্য- বাংলাদেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্য শুধু সম্পদ কিংবা অর্থের নয়, ভোগেরও বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভোগের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হতে পারেনি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ দুর্বল হয়ে গেছে। ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে।
রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বুধবার দুপুরে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা : শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক সুরক্ষা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রাক-নির্বাচনের সময় পরিস্থিতির কারণে উৎসাহবোধ করিনি। কিন্তু এবার নির্বাচনের প্রাক্কালে গত দেড় দশকের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা আমরা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। এটা করতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, জাতীয় উন্নয়নের যে আখ্যান বা বয়ান আমরা সর্বদা শুনি, সেটা কতখানি সত্যি এবং মজবুত সেটা বোঝা প্রয়োজন। সেটা বুঝতে গিয়ে বাংলাদেশের সাতটি জায়গায় বিপন্ন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০০ জন মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা এগিয়েছি সন্দেহ নেই। যে মানুষগুলো বিপন্ন অবস্থায় আছে, তাদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারিনি। উন্নয়নের মধ্যে ন্যায্যতা আনতে হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষের হিস্যাকে সামনে আনতে হবে। উন্নয়নের ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনাই হলো আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতাই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে জায়গা দেয়। সবচেয়ে বড় ক্রীড়াক্ষেত্র হলো নির্বাচন। নির্বাচনের অঙ্গীকারগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর উন্নয়নকে বারবার উপস্থাপন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর কার্যকর করতে হলে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি আনতে হবে। না আনতে পারলে আমাদের ওই ঘাটতি কখনোই পূরণ করতে পারব না। গণতান্ত্রিক জবাবদিহি ও নাগরিকদের অধিকার প্রকাশ করার সবচেয়ে বড় ক্রীড়াক্ষেত্র নির্বাচন। এজন্য জাতীয় নির্বাচনে এই মানুষগুলোর কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করতে হবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ দুর্বল হয়ে গেছে। এর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সাংস্কৃতিক মান, রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক সঞ্চালনের সব জায়গায় আমাদের বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণি সব সময় বড় ভূমিকায় ছিল। কিন্তু এখন তাদের ভূমিকা নির্জীব হয়ে গেছে। সাম্প্র্রতিককালে ওই ভূমিকা ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। যার কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। আর মধ্যবিত্তদের নির্জীব হওয়ার ফলে অলিগার্কদের উত্থান হয়েছে। এই অলিগার্করা অত্যন্ত বিত্তবান, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও আন্তর্জাতিকভাবে যুক্ত।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। মিডিয়া ব্রিফিং পরিচালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু ও সামাজিক সুরক্ষায় সব শ্রেণির মানুষের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে চারটি পৃথক উপস্থাপনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইশতিয়াক বারী, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা ডা. ইয়াসমিন এইচ আহমেদ ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।