জটিল পরিস্থিতিতে বিশ্ব। চ্যালেঞ্জে রয়েছে শান্তি ও গণতন্ত্র। বাড়ছে উগ্রবাদ। দিনদিন সংকুচিত হয়ে আসছে সুশীল সমাজ এবং এনজিওর (বেসরকারি সেবা সংস্থা) ভূমিকা। রাজনৈতিক কারণেও তারাও দ্বিধাবিভক্ত। মানুষের মৌলিক অধিকার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। এ অবস্থার উত্তরণে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। বিশেষ করে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে এগিয়ে আসতে হবে।
শনিবার রাজধানী ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের প্রথম দিনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে। আফ্রিকার দেশ মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মওসা মারা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এতে বক্তব্য দেন সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান এবং চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। এছাড়াও বিভিন্ন সেশনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অতিথিরা বক্তব্য দেন। সোমবার সম্মেলন শেষ হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই অঞ্চলের শান্তি-স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ৫০টি অধিবেশনে ৭৫টি দেশের ২ শতাধিক আলোচক রয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি ছয় শতাধিক। এবারের আলোচ্য বিষয় ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতি। সম্মেলনের লক্ষ্য বে অব বেঙ্গল অঞ্চলের দ্রুত বিকাশমান পরিস্থিতিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জানা-বোঝা। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। পাশাপাশি এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা।
মালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মওসা বলেন, আমরা গণতন্ত্র, শান্তির স্বপ্ন দেখি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী এ ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জে রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বৈষম্য বাড়ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত। জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে ঝুঁকি। এরপর রয়েছে উন্নত দেশগুলোর নানা যুদ্ধের প্রভাব। কিছু কিছু অঞ্চলে ক্রমেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংকুচিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময়ে তৈরি হচ্ছে উত্তেজনা। ছড়িয়ে যাচ্ছে মৌলবাদ। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া দ্বন্দ্ব, আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চলছে। বিভিন্নভাবে অন্য দেশগুলোকে তাদের আয়ত্তে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখন জোটবদ্ধতা কমে যাচ্ছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
মওসা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরেকটি সমস্যা তৈরি করেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনো পক্ষেরই এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা নেই। কিন্তু তৈরি করছে ধ্বংসযজ্ঞ। ফলে দুঃখের বিষয়- এ যুদ্ধ শেষ হবে না। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত শক্তি আছে। মহাদেশ হিসাবে তারা ধনী। কিন্তু তারা দ্বিধাবিভক্ত। তারা নিজেদের মধ্যে বিভিন্নভাবে সমস্যা তৈরি করছে। এর সবকিছুই বিশ্বশান্তির জন্য তৈরি করছে হুমকি।’
মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বের ৬৫ শতাংশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বৈশ্বিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৫০ শতাংশ এখানে। বিশ্ববাণিজ্যের উলেখযোগ্য এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। এখানকার মানুষ পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলো যেসব সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো এই সম্মেলনে দৃষ্টিগোচর করা হবে। মূলত ভারতীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। সমস্যা সমাধানে থাকবে বিভিন্ন সুপারিশ।
জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমান সময় খুবই জটিল। পৃথিবীতে যুদ্ধের কারণে দেশ বিভক্ত হচ্ছে। এটা খুবই ভয়ের যে শান্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো আশা ও সুযোগ আছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুগুলো আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে উদ্যোগ নিতে হবে।
সুশীল সমাজের ভূমিকা নিয়ে একটি সেশনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজনৈতিক দল যখন রাস্তায় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে, তখন সুশীল সমাজ তাদের বন্ধু থাকে। কিন্তু তারা আবার যখন ক্ষমতায় যায়, তখন সুশীল সমাজ শত্রু হয়ে যায়। তিনি বলেন, এখন পরামর্শ দিয়ে কাউকে এগিয়ে নেওয়ার সময় নয়। এখন সময় টিকে থাকা এবং নতুন কোনো সুযোগের জন্য অপেক্ষা করা।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সেশনে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সম্ভাবনা, আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য ও আয়ের সমতা উন্নতির প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বক্তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করছে ইউএস এআইডি, ইউকে এইড, ইউএনডিপি, এশিয়া ফাউন্ডেশন, ঢাকার অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন এবং জার্মান দূতাবাস।