টেকসই অর্থায়নে অর্থ ও সক্ষমতার ঘাটতি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:২৩ পিএম
দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও পরিবেশকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া টেকসই অর্থায়নে অর্থ ও সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব ঋণ যা বিতরণ হচ্ছে, তার মধ্যে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংক পিছিয়ে আছে।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) ‘টেকসই ব্যাংকিং এবং অর্থায়ন’ শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে যে তহবিল পাচ্ছি সেটার ব্যবহারেও অনেক পিছিয়ে আছি। নাগরিকদের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে না পারলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অর্থায়নে কাজ করছে। পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত অর্থায়ন সম্প্রসারণে বিভিন্ন পলিসি প্রণয়ন করছে।
বিশেষ অতিথি ইআরডির যুগ্মসচিব একেএম সোহেল বলেন, জলবায়ু সংকটে অর্থায়নের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (২০২৩-২০৫০) বাস্তবায়ন করতে হলে ২৩০ বিলিয়ন ডলার দরকার। কিন্তু সেখানে বছরে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার খরচ করি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ২০ শতাংশ টেকসই অর্থায়ন ও ৫ শতাংশ সবুজ অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কিন্তু এটা বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরিং করলেও ব্যাংকের পক্ষ ক্ষেত্রে ফলোআপ কী। সেটা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে যে রিপোর্টিং করি সেখানে অনেক কাগজের রিপোর্ট জমা দিতে হয়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক কমিয়েছে, তবু সম্পূর্ণ কাগজ থেকে বেরিয়ে আসতে পারা যায় কিনা দেখতে হবে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেন, গ্রিন ফাইন্যান্সিং, সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং অপেক্ষাকৃত নতুন। প্রয়োজনের তাগিদেই এটা হয়েছে। ব্যাংকারদের জন্য অপারেশন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, টেকসই অর্থায়ন এখনো ব্যাংকের ব্যবসায়িক নীতি কৌশলের মৌলিক অংশ হতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে তাই করছি। মেয়াদি ঋণ ৫ শতাংশ ব্যাংকগুলো পূরণ করতে পারছে কিন্তু বাকি মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই অর্থায়ন করতে পারছে না। অপারেশনালি এটার মধ্যে মানুষকে আনা অনেক কঠিন।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ গেছে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স খাতে। একই সময়ে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) মোট ঋণের ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ বিতরণ হয় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স খাতে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ব্যাংকের চেয়ে নন ব্যাংক ভালো করেছে। যদিও এটা অনেক কম।
তিনি আরও বলেন, এনবিএফআইয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে; একই সঙ্গে সরকারও ইডকলের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান করে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিংয়ে অর্থায়ন করছে। যদিও এসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান অধিকাংশের আকার অনেক ছোট এবং টেকসই অর্থায়নের অবদান রাখার সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া এসব এনবিএফআই প্রতিষ্ঠান নিজেদের সাসটেইনেবলিটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে শুধু এনবিএফআই নয় কিছু ব্যাংকও টেকসই সমস্যার মধ্যে রয়েছে।