অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি পাচ্ছে ৬ প্রতিষ্ঠান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম
শিল্প স্থাপনের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২১ একর জমি পাচ্ছে ছয় প্রতিষ্ঠান। এসব জমি লিজ দিচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এজন্য বুধবার লিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজা কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানে এই চুক্তি হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। অনুষ্ঠানে বেজার পক্ষে নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. মজিবর রহমান এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দায়িত্বশীলরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এতে যেসব প্রতিষ্ঠান জমি পাবে সেগুলো হলো- লিনডে বাংলাদেশ লিমিটেড, মাস্টার র্যাক অ্যান্ড ফার্নিচার, সানজানা ফেব্রিকস লিমিটেড, ওএমসি লিমিটেড, এসএফএল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড এবং আই কিনবো ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বেজা কখনও বিসিক হবে না। বিসিক যেমন প্রতি জেলায় শিল্পনগরী গড়ে তুলেছে। কিন্তু মানুষ জমি নিয়ে যুগের পর যুগ ফেলে রেখেছে। এই সুযোগ বেজায় নেই। এখানে যারা জমি লিজ নিয়েছে কিন্তু টাকা পরিশোধ কিংবা শিল্প স্থাপন করেনি তাদের জমি লিজ চুক্তি বাতিল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, যাদের সঙ্গে চুক্তি হলো এসব প্রতিষ্ঠানই নিজ নিজ খাতে স্বনামধন্য এবং দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। কাজেই বেজার সঙ্গে এসব বিনিয়োগকারীর যোগসূত্র স্থাপনের ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পণ্যের বৈচিত্র্য সাধন হবে।
শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগকারীদের পরিষেবা প্রদানে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও বেজা তা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে সব সরকারি সংস্থার সঙ্গে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ নিশ্চিত করছে। তিনি বলেন, সিইটিপি স্থাপন করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণে বেজা বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করছে।
চুক্তির আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৫ একর জমিতে অক্সিজেন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট স্থাপন করবে। যে খাতটি এই শিল্প নগরে এ মুহূর্তে নতুন। প্রতিষ্ঠানটি শিল্প স্থাপনে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভাবসু সেনগুপ্ত বলেন, মেডিকেল গ্যাস ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস যেমন নিয়ন, আর্গন, হাইড্রোজেন এবং ইলেক্ট্রোড উৎপাদন ও সরবরাহে প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষস্থানে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জমি হস্তান্তরের পরই তারা দ্রুত শিল্প স্থাপন করতে আগ্রহী।
এ ছাড়া মাস্টার র্যাক অ্যান্ড ফার্নিচার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর-এ ৩ একর জমিতে শিল্প কারখানার জন্য উপযুক্ত র্যাক ও অন্যান্য আসবাব উৎপাদন শিল্প স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ শিল্প স্থাপনে প্রায় ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৮০০ জনের। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আল মামুন বলেন, বিভিন্ন খ্যাতনামা স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিতে তার প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে ভিন্ন পণ্য সরবরাহ করে আসছে। তিনি জানান, পূর্বে এই র্যাক আমদানি করা হলেও এখন স্থানীয় বাজারের বিকাশ হয়েছে এবং উৎপাদিত হচ্ছে।
সানজানা ফেব্রিকস লিমিটেড সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৩ একর জমিতে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলবে। এশিয়াটিক গ্রুপের এই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ২০০৪ সাল থেকে দেশে শিল্পের প্রসারে কাজ করছে। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেইন বলেন, পর্যটন বিকাশে তার প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা ও অবদান রাখতে ইচ্ছুক।
ওএমসি লিমিটেড সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ২ একর জমিতে ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলবে এবং প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান প্রায় ৩৫০ জন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রিজোয়ান মান্নান বলেন, ৪৩ বছর যাবত বাংলাদেশে স্টেনলেস স্টিল, কিচেন সামগ্রী, টেক্সটাইল টেস্টিং, রিয়েল এস্টেট শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
এসএফএল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ৬ একর জমিতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলবে। এতে প্রায় ১০০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড নামক মার্চেন্ট ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফাত বলেন, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও টেলিকম খাতে তার কোম্পানি ২০০৮ থেকে কাজ করছে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠান ১২০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন ছাড়াও বৃহৎ টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর টাওয়ার ব্যবস্থাপনা ও সাবমেরিনের কাজে যুক্ত রয়েছে।
অন্যদিকে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে আই কিনবো ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২ একর জমিতে প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটি কিচেন অ্যাম্পালায়েন্স শিল্প-কারখানা স্থাপন করবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদ বলেন, মিয়াকো একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড, যা দেশের আমদানিনির্ভর কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স খাতকে উৎপাদনশীল খাতে পরিণত করছে।