Logo
Logo
×

অন্যান্য

এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম দিন: কৌতূহল ও উচ্ছ্বাসে নির্বিঘ্ন চলাচল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম

এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম দিন: কৌতূহল ও উচ্ছ্বাসে নির্বিঘ্ন চলাচল

কাঙ্ক্ষিত এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার কৌতূহল, আগ্রহ ও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না রাজধানীবাসীর অনেকেরই। এর প্রমাণ মেলে এক্সপ্রেসওয়ের টোল কাউন্টারগুলোর সামনে অপেক্ষমাণ বেশ কয়েকটি গাড়ি দেখে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কাকডাকা ভোরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে গাড়ি নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ ছিলেন তারা। 

সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৬টায় টোল কাউন্টার দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। টোল পরিশোধ করে একে একে গাড়ি প্রবেশ করে স্বপ্নের এ উড়াল সড়কে। এমন দৃশ্য ছিল রাজধানীর বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা টোল প্লাজায়। 

কয়েকটি গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, কাওলা থেকে মাত্র ১০-১২ মিনিটে তারা পৌঁছে গেছেন ফার্মগেট। তাদের কয়েকজন আবার এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ফিরেও এসেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু কাওলা নয়, কুড়িল ও বিজয় সরণি প্রবেশপথেও প্রায় একই ধরনের চিত্র ছিল। চালুর প্রথম প্রহরে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চেয়েছেন এসব নগরবাসী। কেউ কেউ গাড়ির খোলা ছাদেও ঘুরে বেরিয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করে কয়েকজন গাড়ি থামিয়ে সেলফি ও ছবি তুলেছেন। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা ও নামার পথেও ছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। চালুর প্রথম দিনে ১৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭২৭টি গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করেছে। এতে ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০ টাকা টোল পেয়েছে সরকার। 

এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করে বারিধারার বাসিন্দা মো. রিয়াজুল কবীর যুগান্তরকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ যখন চলে, তখনই মনস্থির করেছি প্রথমদিনই এটিতে উঠব। ওই ইচ্ছা থেকেই রোববার পৌনে ৬টায় আর্মি গলফ ক্লাবের টোল প্লাজায় গিয়েছি। এটি চালুর পরপরই উঠতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। আমার মেয়ে ও দুই বছর বয়সি নাতনিকেও নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যখন যাচ্ছি, তখন মনে হয়েছে দেশ হিসাবে অনেক দূর এগিয়েছি। বিদেশে গিয়ে এমন সড়কে যেমন চড়ে থাকি, দেশের সড়কেও চড়লাম। এটাই আমার গর্ব। 

দেশের দ্বিতীয় উড়াল সড়কের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকাল ৬টা থেকে সবার জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেঁধে দিয়েছে সেতু বিভাগ। উত্তরা থেকে ফার্মগেটগামী গাড়ি তিনটি স্থান থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করতে পারছে। সেগুলো হচ্ছে- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত কাওলা, প্রগতি সরণি (কুড়িল) ও আর্মি গলফ ক্লাব। এসব স্থান থেকে ওঠা গাড়ি বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, মহাখালী বাসটার্মিনাল ও ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের পাশে নামছে। 

বিপরীতদিকে উত্তরাগামী গাড়ি বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন এবং বনানী রেল স্টেশনের সামনে থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠছে। এসব গাড়ি মহাখালী বাসটার্মিনাল, বনানী, কুড়িল বিশ্বরোড ও বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে নামছে। গাড়ি ওঠা নামার জন্য এয়ারপোর্টে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি র‌্যাম্পও রয়েছে। এই ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে মহাখালী ও বনানী অংশে দুটি র‌্যাম্প আপাতত বন্ধ রয়েছে। বাকি ১৩টি র‌্যাম্প দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি প্রবেশ ও বের হচ্ছে। আগামী জুনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবপুর পর্যন্ত বাকি অংশ নির্মাণ শেষ হবে। তখন উড়াল সড়ক দিয়েই ঢাকার বাইরে বের হওয়া যাবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে রাজধানীর যানজট ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার। রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, হাজার হাজার গাড়ি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করেছে। এসব গাড়ি আগে নিচের সড়ক ব্যবহার করত। এখন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করায় নিচের সড়কে চাপ আগের চেয়ে কমেছে। তিনি বলেন, পুরো প্রকল্প শেষ হলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে। 

সরেজমিন আরও দেখা যায়, সকালে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সড়কগুলোয় গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। বনানী, মহাখালী ও আশপাশ সড়কগুলোয় থেমে থেমে যানজটও তৈরি হয়। তখনও এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট ও সিগন্যাল ছাড়াই একই গতিতে চলেছে গাড়ি। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা গাড়ির সংখ্যাও বেশি ছিল। তবে বেশির ভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি। কিছুসংখ্যক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী বহনকারী বাসও ছিল। যানজট ও ট্রাফিক সিগন্যাল না থাকায় এসব গাড়ির চলাচল ছিল একেবারেই নির্বিঘ্ন। কাওলা থেকে ফার্মগেট ১০-১৪ মিনিট, কাওলা থেকে বনানী ৬-৮ মিনিটে পৌঁছেছেন নগরবাসী। সেতু বিভাগ উড়াল সড়কে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতি বেঁধে দিয়েছে। তবে তা উপেক্ষা করে ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগেও অনেক গাড়ি চলতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ ধীরগতিতে গাড়ি চালিয়ে উড়াল সড়ক থেকে ঢাকার দৃশ্য দেখার চেষ্টা করেছেন। যদিও এক্ষেত্রে অনেকটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেলিং। 

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এজিএম মারুফুর রহমান রানা জানান, সকাল ৮টা ৩২ মিনিটে কাওলা দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠেন তিনি। সকাল ৮টা ৩৮ মিনিটে বনানী নেমে যান। তিনি জানান, টোল বুথ, যাতায়াত পথসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতে, এই পথ পাড়ি দিতে আগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগত। এখন মাত্র কয়েক মিনিট লাগছে। তার ভাষ্যমতে এটি একটি চমৎকার প্রকল্প।

সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে বিজয় সরণির তেজগাঁও টোল প্লাজায় গিয়ে দেখা যায়, গাড়ির জট না থাকলেও একের পর এক গাড়ি আসছে। টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করছে। সেখানকার ৬টি টোল বুথের চারটি খোলা ছিল। সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টায় এই পথ দিয়ে ১৯৬টি গাড়ি প্রবেশ করে। কয়েকটি গণমাধ্যমের কর্মী সেখান থেকে উত্তরার উদ্দেশে রওয়ানা হন। মাত্র ১৩ মিনিটেই গন্তব্যে পৌঁছান। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কাওলা টোল প্লাজায় অবস্থান করে দেখা গেছে, সেখানকার ছয়টি বুথই খোলা। গাড়িরও চাপ ছিল। এরপর এক্সপ্রেসওয়েতে মাত্র ১১ মিনিটে ফার্মগেট পৌঁছান তারা। সেখানে নামার পর রাস্তায় গাড়ির চাপ থাকলেও তা যানজটে রূপ নেয়নি। 

কোন রুটে কত গাড়ি : জানা যায়, সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭২৭টি গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করেছে। এসব গাড়ির টোল থেকে সেতু বিভাগের আয় হয়েছে ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০ টাকা। এদিন বিমানবন্দর থেকে বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেটে গাড়ি চলেছে ৮ হাজার ৪২৭টি। কুড়িল থেকে বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেট গেছে ১ হাজার ৮৬৪টি। বনানী থেকে কুড়িল ও বিমানবন্দর গেছে ১ হাজার ৭২৩টি। তেজগাঁও থেকে মহাখালী, বনানী, কুড়িল ও বিমানবন্দর গেছে ২ হাজার ৭১৩টি। এক্সপ্রেসওয়ে যেই দূরত্বেই চলুক না কেন, প্রতিটি গাড়িকে সমান হারে টোল পরিশোধ করতে হয়। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও হালকা ট্রাককে ৮০, বাস ও মিনিবাস ১৬০, মাঝারি ট্রাক ৩২০ এবং ভারী ট্রাক বা ট্রেইলরে ৪০০ টাকা টোল দিতে হয়। 

সিএনজি ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে না দেওয়ায় ক্ষোভ : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব যানবাহনের চালকরা। রোববার প্রতিটি টোল প্লাজায় এসব যানবাহনের জটলা ছিল। তাদের দাবি, তাদেরও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হোক। 

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, এটি ব্যবহার করতে পারলে আমরা কম সময়ে কয়েকটি গন্তব্যে যেতে পারব। তখন ট্রিপও বেশি দিতে পারব। মোটরসাইকেলচালকদের দাবি, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করলে কেন এক্সপ্রেসওয়েতে চলতে পারবে না। যদিও সেতু বিভাগ জানিয়েছে, দুর্ঘটনা এড়াতেই তারা ছোট যান চলাচলের অনুমতি দিচ্ছেন না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম