Logo
Logo
×

অন্যান্য

২০২৯ সাল পর্যন্ত বহাল নিয়ে বিশেষজ্ঞ মত

ইইউতে বর্ধিত জিএসপি কাজে লাগাতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:০১ পিএম

ইইউতে বর্ধিত জিএসপি কাজে লাগাতে হবে

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে জিএসপি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ২০২৬ সালের পর এ সুবিধা পাবে না। 

তবে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, আগামী ২০২৯ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধার সময় বর্ধিত করেছে ইইউ। আর শুল্কমুক্ত সুবিধা ‘জিএসপি প্লাস’ পেতে সরকার কাজ করছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ধিত জিএসপি সুবিধার সময় শেষ হতে আরও ছয় বছর। এর মধ্যে প্রস্তুতি নিতে হবে পরবর্তী করণীয় নিয়ে। এই সুবিধা পেয়ে খুশি হলেও এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে না।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর সঙ্গে বৈঠক হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের।

বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা চালু ছিল ২০২৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এটি বর্তমানে ২০২৯ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়াতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক ব্রাসেলসের সঙ্গে যোগাযোগে আছি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, আগামী ২০২৯ সালের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে ট্রান্সফর্ম করতে হবে। এই সুবিধা শেষ হতে আরও ছয় বছর। এরপর কী হবে সে বিষয় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার। অর্থাৎ জিএসপি প্লাস কি আমরা পাব নাকি পাব না। পরবর্তীকালে জিএসপি প্লাস পেতে আমাদের কী করতে হবে। এটি লেবার বা গণতন্ত্র বা শ্রম যে ইস্যুই হোক তা সরকারের জানা দরকার।

জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। প্রতিবছর বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, তার ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ওই অঞ্চলে বাংলাদেশের ৯৭ শতাংশ রপ্তানি পণ্য জিএসপি সুবিধা পায়। 

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় যুগান্তরকে জানান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন আরও তিন বছরের জন্য জিএসপি সুবিধা দিয়ে থাকে। ফলে বাংলাদেশসহ আরও যে দেশগুলো ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে তাদের সবাই এই সুবিধা পাবে, এ সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশকেন্দ্রিক নয়। ভবিষ্যতেও যারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে তাদের জন্য এই অতিরিক্ত তিন বছরের সুবিধা থাকবে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রুলস-রেগুলেশনে বলা আছে।

এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাজার সুবিধাকেন্দ্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এই সুবিধা পেয়ে আমরা খুশি হলেও এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যে পরিস্থিতি হবে তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে না। তখন একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে। ফলে এখন থেকেই উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা, নতুন পণ্য রপ্তানি বক্সে যুক্ত এবং সম্ভাবনাময় বাজারসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা হবে কিনা সেটি ভাবতে হবে। তিনি বলেন, ইইউ যে সুবিধা বাড়িয়েছে সেটি কাজে লাগানো দরকার।

এদিকে এ সিদ্ধান্তকে ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানিয়েছে। বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জিএসপি সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস পোশাকশিল্পের সুখবর, যদিও আমরা এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী ৬ বছর অর্থাৎ ২০৩২ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এটা বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক বড় অর্জন বলে মনে করি। এ সময়ের মধ্যে পোশাক খাত নিজেদের প্রস্তুতিকে কাজে লাগাতে পারবে। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পোশাকশিল্প অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে। একদিকে অর্ডার কমে গেছে, অন্যদিকে জ্বালানি, পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং পোশাকের মূল্যবৃদ্ধিতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।

বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জিএসপি সুবিধা বৃদ্ধি নিয়ে আমরা সন্দিহান ছিলাম। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেহেতু আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, তাই জিএসপি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোয় উভয় দেশই উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, ১০০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, জিএসপির সুবিধা বাড়লে তা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম