খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশে বাড়ছে অনেক দেশে কমছে: বিশ্বব্যাংক
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৩, ১১:০৮ পিএম
বৈশ্বিক মন্দায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ফলে অনেক দেশে বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ হার বাড়ছে। যদিও আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেছে। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়- বাংলাদেশ, মিসর, পাকিস্তান, জাপান, ভিয়েতনাম, আর্জেন্টিনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, মালদ্বীপে এ হার কমেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া সব দেশেই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমছে। বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেশি এমন সব দেশেও এ হার কমতে শুরু করেছে।
সূত্র জানায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমা বাড়ার সঙ্গে বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের কারণ জড়িত। তবে বাংলাদেশে মূলত পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাবে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার কমছে না।
বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করে এমন সব দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমায় আগামীতে এ দেশেও কমবে। কারণ এখনো বাংলাদেশ বিদেশ থেকে বেশি দামে পণ্য আমদানির নামে মূল্যস্ফীতি আমদানি করছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ ৯.৯ শতাংশে উঠেছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ৮.১ শতাংশে নামে। মার্চে তা আবার বেড়ে ৯.১ শতাংশ হয়। এপ্রিলে তা আবার কমে ৮.৮ শতাংশে নামে। মে মাসে আবার বেড়ে ৯.২ শতাংশে ওঠে। জুনে তা আরও বেড়ে ৯.৭ শতাংশে ওঠে।
বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। দেশটিতে গত সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ এ খাতে মূল্যস্ফীতির হার ৮.৪ শতাংশে উঠেছিল। এর পর থেকে তা কমছে। গত মে পর্যন্ত কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ভুটানেও খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ৫.৮ শতাংশে উঠেছিল। গত মার্চে তা কমে দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছিল। এখন তা সামান্য বেড়ে ৩.২ শতাংশ হয়েছে।
নেপালে গত সেপ্টেম্বরে এ হার সর্বোচ্চ ৮.২ শতাংশ ওঠে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে সামান্য বেড়ে মার্চে আবার কমেছে। এপ্রিলে বেড়ে মে মাসে আবার কমে ৫.৫ শতাংশ হয়েছে।
পাকিস্তানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ২৮.৮ শতাংশ। গত মে পর্যন্ত তা বেড়ে ৪৮.৭ শতাংশে উঠেছে। জুনে সামান্য কমে ৩৯.৫ শতাংশে নেমেছে।
মালদ্বীপে গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ৬ শতাংশ। জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ ৭.৮ শতাংশে উঠেছিল। মার্চে তা আরও বেড়ে ৮ শতাংশে ওঠে। এর পর থেকে কমে এখন ৪.৭ শতাংশে নেমেছে।
তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলা শ্রীলংকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি আগস্টে সর্বোচ্চ ৮৫.৮ শতাংশে উঠেছিল। এখন তা কমে জুনে ৪.১ শতাংশে নেমেছে। তবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমার কারণে এ হার কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। চীনে গত সেপ্টেম্বরে এ হার সর্বোচ্চ ৮.৮ শতাংশে ওঠে। এর পর থেকে তা সামান্য হারে ওঠানামা করেছে। গত মে মাসে ১.১ শতাংশে নামে। জুনে সামান্য বেড়ে ২.৩ শতাংশ হয়েছে। মালয়েশিয়ায় গত নভেম্বরে সর্বোচ্চ ৭.৪ শতাংশে উঠেছিল। এখন তা কমে ৫.৯ শতাংশে নেমেছে। ইন্দোনেশিয়ায় গত বছরের জুলাইয়ে ছিল সর্বোচ্চ ১০.৩ শতাংশ। গত জানুয়ারি পর্যন্ত তা কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে মার্চ থেকে আবার কমতে শুরু করেছে। জুনে তা কমে এখন ১.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। থাইল্যান্ডে গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৯.৮ শতাংশ। এখন তা কমে ৩.৪ শতাংশে নেমেছে। ফিলিপাইনে গত জানুয়ারিতে বেড়ে সর্বোচ্চ ১১.২ শতাংশে উঠেছিল। ফেব্রুয়ারি থেকে তা কমতে থাকে। গত জুনে কমে ৬.৭ শতাংশে নেমেছে।
ব্রাজিলে গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ১৪.৭ শতাংশ হয়েছিল খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এর পর থেকে কমে গত জুনে ৪ শতাংশে নেমেছে। গত জুলাইয়ে আর্জেন্টিায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭০.৬ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ১১৭.৮ শতাংশে উঠেছে। অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির মুদ্রার মান ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় তাদের মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। এর প্রভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে।
তুরস্কে গত নভেম্বরে সর্বোচ্চ ১০২ শতাংশে উঠেছিল। এখন তা কমে ৫৪.১ শতাংশে নেমেছে। মিসরে এ হার বেড়ে যাচ্ছে। গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ২২.৪ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৮ শতাংশ। ভিয়েতনামে গত জুলাইয়ে ছিল ২.৯ শতাংশ। এখন তা বেড়ে ১৩.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জাপানে ৪.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ৯.৬ শতাংশ হয়েছে। দেশটিতে এ হার বাড়ার কারণ হচ্ছে তারা নিজেদের মুদ্রা ইয়েনকে প্রতিযোগিতায় ধরে রাখতে বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। রাশিয়াতে গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ১৬.৮ শতাংশ। গত এপ্রিলে তা শূন্যে নেমে আসে। মে মাসে নেতিবাচক পর্যায়ে নেমে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় একই সময়ে ছিল ১০.৪ শতাংশ। গত মার্চে তা ১৪.৫ শতাংশে ওঠে। এখন ১২ শতাংশে নেমেছে।
ফ্রান্সে গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ৭.৪ শতাংশ। পরে তা বেড়ে মার্চে ১৭.২ শতাংশে ওঠে। পরে তা কমে ১৩.৬ শতাংশে নেমেছে। জার্মানিতে গত বছরের জুলাইয়ে ছিল ১৪.৮ শতাংশ। এপ্রিলে তা বেড়ে ১৭.২ শতাংশে ওঠে। এখন তা কমে ১৩.৭ শতাংশে নেমেছে। ইতালিতে জুলাইয়ে ছিল ১০.২ শতাংশ। অক্টোবরে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৩.৮ শতাংশে ওঠে। এখন তা কমে ১১.২ শতাংশে নেমেছে। কোরিয়াতে জুলাইয়ে ৮.১ শতাংশে ওঠে। পরে তা কমতে থাকে। এখন ৩.৮ শতাংশ হয়েছে। কুয়েতে জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৮.২ শতাংশে ওঠে। এখন তা কমে ৭.২ শতাংশে নেমেছে। সৌদি আরবে জুলাইয়ে ছিল ৪.২ শতাংশ। অক্টোবরে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪.৬ শতাংশে ওঠে। এখন তা কমে দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। সিঙ্গাপুরে জুলাইয়ে ছিল ৬.১ শতাংশ। পরে তা বেড়ে জানুয়ারিতে ৮.১ শতাংশে ওঠে। এখন তা কমে ৬.৮ শতাংশে নেমেছে।
যুক্তরাজ্যে জুলাইয়ে ছিল ১২.৯ শতাংশ। পরে তা মার্চে ১৯.৮ শতাংশে ওঠে। এর পর থেকে কমে এখন ১৮.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আগস্টে ১১.৪ শতাংশে উঠেছিল। এখন তা কমে ৬.৭ শতাংশে নেমেছে।