নিয়ন্ত্রণহীন বাজার: চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু বেগুন শসা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০:২৩ পিএম
নিয়ন্ত্রণহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার। চাহিদা বিবেচনায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। রোজা ঘিরে লেবু, বেগুন ও শসার দাম নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চলছে। এগুলো দেখারও যেন কেউ নেই। প্রতি কেজি বেগুন কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ১০০ টাকা। শসার কেজি ৮০ টাকা। প্রতি হালি (৪ পিস) লেবু ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এক দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
রাজধানীর কাওরান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. আলাউদ্দিন বলেন, আগে ভ্যান গাড়িতে ২০ পিস লেবু ব্যাগে বেঁধে ১৫ টাকায় ডেকে ডেকে বিক্রি করত। এখন সেই লেবুই প্রতি হালি ৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। যদিও গত সপ্তাহেও ৪০ টাকা দিয়ে কেনা গেছে। আসলে বিক্রেতারা রোজার মাসকে প্রতারণার সময় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। তা না হলে সরবরাহ ঠিক থাকার পরও দাম এভাবে বাড়তে পারে না।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে পণ্য কিনতে আসা হামিদুল বলেন, বছরের পুরোটা সময় ধরে বেগুনের চাহিদা থাকে। রোজায় ভাজাপোড়া তৈরি করতে কদর একটিু বেড়ে যায়। তাই বিক্রেতারা এ পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও সেটাই করেছেন। প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। আর গোল বেগুন ৮০ টাকা; যা ৭ দিন আগেও ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি শসা কিনতে লাগছে ৮০ টাকা; যা গত সপ্তাহে ৬০ টাকা দিয়ে কেনা গেছে।
এদিকে বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। বাজার ঘুরে দেখা যায়, টমেটো প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা কেজি, ধনেপাতা প্রতি কেজি ১৪০-১৬০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা। যা একদিন আগে ২৬০ টাকা ছিল। গরুর মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকা দরে।
রোজা উপলক্ষ্যে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি : রোজা উপলক্ষ্যে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রাজধানীর ২০টি স্থানে বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলেও প্রচার না থাকায় ভিড় ছিল কম। তবে যারা এসেছেন তারা হাসিমুখে পণ্য নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রাজধানীর ফার্মগেট-খামারবাড়ি এলাকায় কুলিং ভ্যানের কাছে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুলভ মূল্যে প্রতি লিটার তরল প্যাকেটজাত দুধ ৮০ টাকা, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস ৯৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা ও প্রতি ডজন (১২ পিস) ডিম ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অধিদপ্তরের প্রধান সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. মো. জসিম উদ্দিন বলেন, রাজধানীর ২০টি স্থানে ২৮ রমজান পর্যন্ত বিক্রি কার্যক্রম চলমান থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে সুলভ মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে; যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ কিনে খেতে পারে।
রোজার প্রথম দিন ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান : পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজার প্রথম দিনই ঢাকার কাওরান বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সকালে ওই বাজারের কিচেন মার্কেট থেকে অভিযান শুরু হয়। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। এ সময় ঢাকা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান শেষে মনজুর শাহরিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে বিশেষ কিছু সবজির দাম বেড়ে যায়। এগুলো আমরা আজকে তদারকি করছি। এ ছাড়া মুদি সামগ্রী ও মুরগি নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কিনা- সেটি তদারকি করেছি। লেবু ও বেগুনের দাম বেশি রাখায় কয়েকজন দোকানিকে জরিমানা করেছি।