যেভাবে খুশি সেভাবেই লুটপাট হচ্ছে: সংসদে মোকাব্বির
সংসদ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৬ পিএম
গণফোরাম দলীয় সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেছেন, এই সংসদের বর্তমান এবং সাবেক অনেক সদস্য, অনেক আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ দেশের অর্থ লুটপাট করেছেন। আর এ অর্থে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম তৈরি করেছেন।
তিনি বলেন, এটা আমার কথা নয়, প্রতিনিয়তই এসব খবর আমরা গণমাধ্যমে দেখতে পাই। এই গত কয়েক দিন আগেও একজন আমলার যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাড়ির চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এই সেকেন্ড হোম নিয়ে কথা বললে দেখা যাবে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে। তাই আমি বিস্তারিত ঘটনায় যাব না।
রোববার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় এই সদস্য এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যেভাবে খুশি সেভাবেই লুটপাট করছে, তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। আজ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। অনেকে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ন্যায্যমূল্যের কার্ড দিচ্ছে- এখানে মারাত্মক অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই কার্ডগুলো ৮০ ভাগ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে, চাইলে ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে। দুর্নীতিবাজ ও অসাধু ব্যবসায়ী সব সময় মানুষের কষ্টকে পুঁজি করে লুটপাট করে।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব- আগেও বলেছি আজকেও দাবি করছি এসব দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের আইনের আওতায় এনে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কয়েকজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, লুটেরাকে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, দুর্নীতি অনেক কমে যাবে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আপনি জাতির পিতার কন্যা সাধারণ মানুষের কষ্টের কথাগুলো মাথায় নিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।
গণফোরামের এ সদস্য বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে সেটা আমরা অস্বীকার করি না, এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি কোভিডের আঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থ পাচার, কিছু কিছু জায়গায় সরকারের অব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাটের কারণে দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বাজারে গেলে দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না।
মোকাব্বির খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইংল্যান্ডে আমার একটি সেকেন্ড হোমের কথা বলেছেন। হ্যাঁ, যুক্তরাজ্যে আমার সেকেন্ড হোম আছে, সেটা গোপনীয় কিছু নয়। আর এটা নিয়ে আমার বিব্রত হওয়ারও কিছু নেই। আমার সৌভাগ্য হয়েছে, আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা, নাম বলতে চাই না, এখানেও আছেন, তারা আমার এই সেকেন্ড হোমে গিয়েছেন। তবে আমি বলতে চাই, লুটপাটের অর্থ তো নয়ই, এমনকি বাংলাদেশ থেকে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির কোনো টাকা নিয়েও সেই সেকেন্ড হোম আমি তৈরি করিনি। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমি ইংল্যান্ডে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবসা করে সেই বাড়ির মালিক হয়েছি। এখন আমার পরিবার সেই বাড়িতে বসবাস করছে। আমি ইংল্যান্ডে ব্যবসা করতাম- একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে সেখানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি। বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেছি।
তিনি আরও বলেন, এই সংসদে অনেকেই, এমপি হওয়ার সুবাদে অনেকেই হয়তো শত শত বা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একাধিক গাড়ি, বাড়ি, অট্টালিকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু যেদিন থেকে আমি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করলাম সেদিন থেকে আমার জীবনের মোড় পালটে গেল। বিশেষ করে এই সংসদে সদস্য হওয়ার পর জীবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজেকে জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি। চেষ্টা করি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার দর্শনকে ধারণ করে একজন পরিছন্ন রাজনীতিবিদ হতে।
মোকাব্বির খান বলেন, অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য, আমার মতো হতভাগা এমপি হয় তো এই সংসদে একজনও নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি, বাংলাদেশে আমার নামে কোথাও ফ্ল্যাট, প্লট বা কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। আমি সরকারি কোনো ফ্ল্যাট বা প্লটের জন্য আবেদনও করিনি। এমপি হওয়ার সুবাধে ন্যাম ভবনে একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছি সেটিতে বসবাস করছি। সিলেটে পৈতৃক যে বাড়িটি আছে সেটাও নিজের নামে করার সুযোগ হয়নি। রাজনীতি করলে ঢাকায় নিজের একটা ঠিকানা থাকা দরকার মনে করে উত্তরায় একটি বাড়ি কিনেছিলাম, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সংসদ সদস্য হওয়ার পর অর্থাভাবে এটিও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।
তিনি বলেন, আমি হয় তো একমাত্র সংসদ সদস্য যার কোনো গাড়ি নেই। এমপি হওয়ার সুবাদে ট্যাক্স ফ্রি একটি গাড়ি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমি সেই গাড়িটি নেইনি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা নেব না। ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি একজন সংসদ-সদস্যের আইনসিদ্ধ অধিকার। বিবেক, নীতি-নৈতিকতার কাছে সেটি স্বস্তিদায়ক মনে হচ্ছে না। একটি ভাড়া গাড়িতে চলাফেরা করি এবং এমপি হিসাবে যে সম্মানি ভাতা পাই বাকিটা ইংল্যান্ডে আমার পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে জীবনযাপন করি।
একই আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি যতই হরতাল, অবরোধ করুক বাংলাদেশে আমরা শতদল ফোটাবোই। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা অবর্ণনীয়। ১৫ সালে তারা অবরোধের নামে গাড়িতে আগুন দিয়ে একশর মতো মানুষ হত্যা করেছিল। হরতাল-অবরোধের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে খালেদা জিয়া বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। এই সেদিনও বলেছিল, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। কিন্তু শেখ হাসিনার উদারতার কারণে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছেন। বিএনপি যতই সন্ত্রাস করুক, যতই হরতাল, অবরোধের ডাক দিক বাংলাদেশে আমরা শতদল ফোটাবোই।