বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চুপ থাকায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কঠোর সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার, অর্থনৈতিক অবস্থা, রিজার্ভ, রেমিট্যান্স কিছু নিয়েই অর্থমন্ত্রী কথা বলেন না। তিনি অত্যন্ত সজ্জন, বিনয়ী, অভিজ্ঞ, বিদ্বান ব্যক্তি। তাকে সম্মান না করে পারা যায় না, কিন্তু তিনি নীরব কেন?
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, অনেকে ‘ফ্রি স্টাইলে’ ঋণখেলাপি হচ্ছে। নয়ছয় করে, ঘুস-দুর্নীতি করে টাকা আয় করছে। সে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে- এগুলো দেখবেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী একেবারে নীরব হয়ে গেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে, বিতর্কে অংশ নিতে হবে। জাতিকে আশাবাদী করতে হবে, বোঝাতে হবে কারা অপপ্রচার চালায়। কারা বলে ব্যাংক শূন্য, রিজার্ভ শূন্য, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। এসবের জবাব দেবে কে? অর্থমন্ত্রী। আশা করি, তিনি ব্যাখ্যা দেবেন।
তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা করা অর্থমন্ত্রীর অর্পিত দায়িত্ব। যারা চুরিচামারি করে, নয়ছয় করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, তাহলে মানুষ দেখবে, থুতু দেবে। কারণ পাচারকারীরা মানুষ না। তিনি বলেন, অনেকে বারবার মন্ত্রী হতে চায়। কারণ এখানে টাকার খনি আছে। টাকার জন্য হতে চায়। বারবার মন্ত্রী হওয়ার দরকার নেই।
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেকটাই ভালো আছে। এজন্য অনেক ভালো কাজ করতে হয়েছে। সেগুলো করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন কিন্তু অনেকে নিজের কাজ না করে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন। এটাই সমস্যা। পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য সারা জীবন দোয়া করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য লুৎফুন্নেসা খান বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখা কঠিন ছিল। তবে সেটা ধরে রাখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছেন। মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি। তিনি বঙ্গবন্ধুর আমলের মতো সাধারণ মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান। সবার জন্য না হলেও গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য এ ব্যবস্থা করার দাবি করেন লুৎফুন্নেসা খান।
তিনি বলেন, এ বছর শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে সবাইকে বই দেওয়া সম্ভব হয়নি। বইয়ে অসংখ্য বানান ভুল, কাগজ নিম্নমানের, বইয়ে সাম্প্রদায়িক বিষয় আছে। এগুলো এ সুন্দর উদ্যোগকে ম্লান করেছে।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, আমিরুল আলম মিলন, সাহিদুজ্জামান, বদরুদ্দোজা ফরহাদ, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দীন এ দিন বক্তব্য দেন।