যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ির বিষয়ে যা বললেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১৪টি বাড়ি আছে ঢাকা ওয়াসার বিতর্কিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের। একটি জাতীয় দৈনিকে এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর এক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অনিয়ম-দুর্নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ির বিষয়ে কথা বলেছেন তাকসিম এ খান।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার ওয়াসা ভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৪টি বাড়ির যে খবর পত্রিকায় বেরিয়েছে, সেটা সর্বৈব মিথ্যা। যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচটি বাড়িতে আমার পরিবার সেখানে বিভিন্ন সময় ভাড়া থেকেছেন। আর একটি বাড়ি আমার স্ত্রীর নামে। আমি, আমার স্ত্রী, সন্তান সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
দুদকের তদন্ত নিয়ে তাকসিম এ খান বলেন, ঢাকা ওয়াসার ভালো কাজ দেখে যাদের ক্ষতি হয়, তারাই এমন অভিযোগ করেন। আমি জীবনে হারাম পয়সা খাইনি। খাব না।
গত বছর তাকসিমসহ ওয়াসার ঊর্ধ্বতনদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। এছাড়া গত ২৫ আগস্ট আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) তাকসিম এ খানের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দেয়। এর মধ্যেই গত সোমবার ‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তথ্য তালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরই ঢাকা ওয়াসার এই এমডির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রে দুর্নীতি করে বাড়ি করেছেন কিনা, সে বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।
আজ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, ‘আমার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি চাকরি করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বাড়ি ও অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে বলে যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, সেটা স্টান্টবাজি। আমার স্ত্রী-সন্তান সেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত, তাই সেখানে একটি বাড়ি কেনায় খুব অসুবিধার কিছু নেই। আমার স্ত্রীর নামে ওই একটা বাড়ি আছে। সেটাকে বাড়ি বলা যাবে না, এটা একটা অ্যাপার্টমেন্ট।… বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে এমন নানান রিপোর্ট এসেছে কিন্তু এগুলো সব মিথ্যা, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই এগুলো পুরোটাই অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যারা ওয়াসা থেকে অনৈতিক সুবিধা পায়নি বা পাচ্ছে না, তারাই মূলত এসব করিয়ে থাকে।’
দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি সেখান (যুক্তরাষ্ট্র) থেকেই ওয়াসায় চাকরি করতে এসেছি। এমন নয় যে, এখানে চাকরি করে আমার সম্পদ ওখানে গড়েছি। আমার স্ত্রী সেখানে সরকারি চাকরি করেন। আমার সন্তানও সেখানে খুব ভালোমানের চাকরি করে। আমি যে ইনকাম করি, তা থেকে ওদের কিছুই দিতে হয় না। তারা ওখানে অনেক ভালো আছে; যে কারণে আমার স্ত্রীর নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে রিপোর্টে যে ১৪টি বাড়ির কথা বলা হয়েছে তা পুরোপুরি অসত্য। এর মধ্যে ৫টি বাসার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে আমার পরিবার বিভিন্ন সময় ভাড়া থেকেছে। কিন্তু মিথ্যা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে দেওয়া হলো। আমার ছেলেও একসময় সেখানে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল, কিন্তু তা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছে। সেখানে অভিভাবক হিসেবে আমার নাম আছে। এই নামগুলো ইন্টারনেট থেকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে।’
ওই প্রতিবেদনে বাড়ির যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়েও কথা বলেন তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, ‘একটা বিল্ডিংয়ে ১০-১৫টা অ্যাপার্টমেন্ট থাকে। সেই অ্যাপার্টমেন্টগুলার বর্তমান বাজার দর কত সেটাও আপনারা ওয়েবসাইট থেকে পাবেন। ১০২টা বেডরুমওয়ালা কোনো বাসা হয় না, আবার ১০২টা বাথরুমওয়ালা কোনো বাসা হয় না। যেগুলো হয় সেগুলা প্রেসেডিয়েনশিয়াল… যেগুলো আমাদের আলোচনার মধ্যেও নাই। সাধারণত আমেরিকায় এমন কোনো বাসা থাকে না। অতএব এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত, কাজেই এটার কোনো ভিত্তি নেই।’