ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) গলার ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আইফোন ব্যবহার করে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প শুরু করেছে। ক্যানসারের সন্দেহজনক রোগীর ক্ষেত্রে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা আশা করছেন, নতুন এই ক্যামেরা ডিভাইসটি স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত করে তাৎক্ষণিকভাবে ছবিগুলো সংগ্রহ করবে এবং দ্রুততার সঙ্গে ক্যানসারের উপস্থিতি পরীক্ষা করে ফল জানিয়ে দিতে পারবে।
৭৬ বছর বয়সি জ্যানেট হেনেসি এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, এমন ধরনের পরীক্ষাগুলোতে সাধারণত তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তার অভিজ্ঞতা থেকে জ্যানেট বলেন, আমি মনে করি এই অ্যাপটি অসাধারণ। এবং এটি অনেক দ্রুততার সঙ্গে ফল জানাতে সাহায্য করে। এ ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে অপেক্ষার সময় কমানো সম্ভব।
এনএইচএসের জাতীয় ক্যানসার ডিরেক্টর ডা. ক্যালি পামার বলেন, শুরুতেই ক্যানসার শনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। যাদের ক্যানসারের জন্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন, তাদের জন্য অপেক্ষার সময় অত্যন্ত উদ্বেগজনক হতে পারে এবং যত দ্রুত সম্ভব ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে রোগীদের জন্য তা অনেক স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রযুক্তির পরিবর্তনে এনএইচএসের উদ্যোগ
এনএইচএসের ক্যানসার রেফারেল ব্যবস্থায় এই র্যাডিক্যাল পরিবর্তন নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপ-আই অ্যাডাপ্টার বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল নর্থ মিডল্যান্ড এনএইচএস ট্রাস্টের কনসালট্যান্ট হেড এবং নেক সার্জন অজিথ জর্জ উল্লেখ করেন, অনেক এনএইচএস ট্রাস্ট রোগীর চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে এবং এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার রোগ নির্ণয় ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তুলতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, সেবা দ্রুত এবং কার্যকর করার মাধ্যমে আমরা ক্যানসারে আক্রান্ত দুর্ভাগা রোগীদের প্রতি আরও মনোযোগী হতে পারি।
ইতোমধ্যে ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে চালানো পরীক্ষামূলক এ প্রকল্পে এক হাজার ৮০০ জনের বেশি রোগী কয়েক দিনের মধ্যে থ্রোট ক্যানসারের থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ফলে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় দুই ৫০ হাজার রোগীর মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ক্যানসার ধরা পড়ে। অতিমারীর পর ক্যানসার পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে, তবে মোট ক্যানসার সংখ্যা পরিবর্তন হয়নি।
এই নতুন এন্ডোস্কোপ-আই অ্যাডাপ্টারে একটি ৩২ মিমি লেন্স এন্ডোস্কোপ আইপিস এবং একটি অ্যাপযুক্ত রয়েছে, যা নার্সদের ছবি সংগ্রহ করে সুরক্ষিত ক্লাউডের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানোর সুবিধা দেয়। এই ডিভাইসটির মাধ্যমে এনএইচএস আশাবাদী যে, এ ধরনের সেবা ভবিষ্যতে অন্যান্য চিকিৎসাব্যবস্থায় ব্যবহার করা যাবে, যার ফলে রোগীদের বাড়ির কাছেই পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ মিলবে এবং হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন কমবে।
দ্রুত ফলাফল জানার লক্ষ্য
এনএইচএস তার রোগীদের জন্য ২৮ দিনের মধ্যে ক্যানসারের উপস্থিতি জানার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। গত চার মাসে ৭৫ শতাংশের বেশি রোগী এই সময়ের মধ্যে তাদের ফল পেয়েছেন। এটি এনএইচএসের সেবার গতি বৃদ্ধি এবং রোগ নির্ণয়ে উন্নয়নের অন্যতম উদাহরণ।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এনএইচএস এবং যুক্তরাজ্যের সরকার মিলে একটি ১০ বছরের পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে হাসপাতাল থেকে সেবার প্রসারিত অংশকে সম্প্রদায় পর্যায়ে সরিয়ে নেওয়া যায়। আরও উদ্ভাবনগুলোর মধ্যে রয়েছে এসোফেজিয়াল ক্যানসার শনাক্ত করতে স্পঞ্জভিত্তিক একটি পরীক্ষা এবং এমন একটি হোম-টেস্টিং কিট, যা কিছু নির্দিষ্ট জেনেটিক ত্রুটির জন্য ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এই প্রাথমিক পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এনএইচএস আশা করছে যে, রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা এবং সেবা দেওয়া যাবে।