Logo
Logo
×

আইটি বিশ্ব

পেজারের আদ্যোপান্ত

স্মার্টফোন নিয়েও উদ্বেগ!

Icon

সাইফ আহমাদ

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্মার্টফোন নিয়েও উদ্বেগ!

স্মার্টফোন নিয়েও উদ্বেগ!

লেবাননে তারবিহীন যোগাযোগ ডিভাইস ‘পেজার’ বিস্ফোরণের পর নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ব। এমনকি ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি রেডিও, গাড়িরও বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ বিস্ফোরণের পর স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পেজারের মতো একই ধরনের ত্রুটি স্মার্টফোনেও ঘটতে পারে কিনা? পেজারের বিস্তারিত সঙ্গে স্মার্টফোন নিয়ে উদ্বেগ কতটা? এ নিয়ে আজকের আয়োজন। লিখেছেন-সাইফ আহমাদ

অভিনব ও আকস্মিক এমন আক্রমণে ভীতি সৃষ্টি হয়েছে; এ প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে বিভিন্ন ডিভাইসকে আর নিরাপদ হিসাবে বিবেচনা করা যাবে কিনা, তা নিয়েও অনেকে তুলছেন প্রশ্ন।

পেজার কী : এটি একটি ছোট এবং বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এটি মূলত সংক্ষিপ্ত বার্তা বা সতর্কতা পাঠাতে ব্যবহৃত হয়। মোবাইল ফোনের বিকল্প হিসাবে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়। বেশিরভাগ পেজার বেস স্টেশন থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ বা বার্তা পাঠায় ও গ্রহণ করে। এ বার্তা কোনো সংখ্যা হতে পারে, আবার কোনো শব্দবন্ধও হতে পারে। এ ডিভাইসটির ছোট স্ক্রিনে সেই বার্তা দেখা যায়। যখন পেজারে কোনো বার্তা আসে, তখন এতে শব্দ হয়, ঠিক যেমন মোবাইলে মেসেজ এলে নির্দিষ্ট টিউন বাজে। অনেক দেশে বিপার নামেও পরিচিত পেজার।

বহুল ব্যবহৃত ছিল পেজার : ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে বহুল ব্যবহার হতো পেজারের। পেশাদার লোকজন অফিসের বাইরেও একে অপরকে দ্রুত কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য পেজার ব্যবহার করতেন। জরুরি পরিষেবাগুলোতে চিকিৎসক, নার্সদের কাছে এটি একটি দরকারি ডিভাইস ছিল। যেহেতু পেজারে মোবাইল নেটওয়ার্কের দরকার পড়ে না, তাই এটি যোগাযোগের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হতো।

পেজারের ব্যবহার কমে গেল যে কারণে : পেজারগুলো ডেডিকেটেড রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। পেজারের পরিসীমা নির্ভর করে ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এবং পেজিং নেটওয়ার্কের কভারেজ এরিয়ার ওপর। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের পর থেকেই পেজারের ব্যবহার কমতে থাকে। আজকাল আর কেউ পেজার ব্যবহার করে না। স্মার্টফোনেই কলিং, মেসেজ থেকে ইন্টারনেটের সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়।

কোথায় এখনো ব্যবহার হয় পেজার : অনেকাংশেই পেজার ব্যবহার কমে গেলেও এখনো কিছু ক্ষেত্রে পেজার ব্যবহার করা হয়। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে পেজার এখনো ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং নেটওয়ার্ক ছাড়াই কাজ করার ক্ষমতার জন্য এগুলো নির্ভরযোগ্য। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হিজবুল্লাহর সদস্যরাও পেজার ব্যবহার করে।

নির্মাতা কারা : পেজার তৈরি করেছে বিএসি কনসালটিং নামের হাঙ্গেরির একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিকে গোল্ড অ্যাপোলোর ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ অনুমতি থাকায় প্রতিষ্ঠানটি নিজেরা তৈরি করলেও পেজারে গোল্ড অ্যাপোলোর নাম ব্যবহার করেছে।

স্মার্টফোনে এমনটি ঘটতে পারে

স্মার্টফোনের বিস্তৃত ব্যবহার এবং লিথিয়ামুআয়ন ব্যাটারির ওপর নির্ভরতা বিবেচনা করলে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে একই ধরনের আক্রমণের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও স্মার্টফোনে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো বেশ কঠিন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্মার্টফোনের সফ্টওয়্যার সিস্টেম এবং নেটওয়ার্ক সংযোগ পেজারের চেয়ে আরও উন্নত মানের। সুতরাং, হ্যাকারদের জন্য এটিকে বিস্ফোরণে রূপান্তরিত করা কঠিন। একইভাবে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে পেজারের তুলনায় ব্যাপক আকারে আক্রমণ চালানো অনেক বেশি কঠিন হবে। কারণ, স্মার্টফোনে একাধিক নিরাপত্তা স্তর রয়েছে এবং ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হওয়া রোধ করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হ্যাকাররা স্মার্টফোনের ফার্মওয়্যারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত গরম বা কিছুটা ক্ষতি করতে পারে। আধুনিক স্মার্টফোনগুলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সার্কিটের মতো সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। আর এ পদ্ধতি ডিভাইসটি অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জিং বন্ধ করে দেয়। বাষ্প চেম্বার এবং গ্রাফাইট স্তরগুলোর মতো উন্নত কুলিং সিস্টেমগুলোও আধুনিক স্মার্টফোনে উপস্থিত রয়েছে, যাতে অতিরিক্ত তাপ নষ্ট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ, স্মার্টফোনগুলো মাঝেমধ্যে ত্রুটিপূর্ণ এবং অতিরিক্ত গরম হতে পারে, তবে খুব কমই বিস্ফোরিত হয়। এমনকি যদি হ্যাকাররা তাপ উৎপন্ন করার জন্য স্মার্টফোনের ব্যাটারি দূর থেকে হ্যাক করার মাধ্যমে ব্যবহার করার চেষ্টাও করে, তবে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ফোনটি অতিরিক্ত গরম হবে এবং ফুলে উঠতে পারে। এর থেকেও বেশি হলে আগুন ধরে যাবে, তবে হিজবুল্লাহর পেজার ঘটনার স্কেলে একটি বিস্ফোরণ অসম্ভাব্য। ‘বিসিএস, চার্টার্ড ইনস্টিটিউট ফর আইটির কর্মী ড্যানিয়েল কার্ড বলেন, ‘কোনো সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে প্লাস্টিকের বিস্ফোরকের মতো সাপ্লাই চেইন আক্রমণ নিয়ে একজন গড়পড়তা ব্যক্তির চিন্তার কোনো কারণ নেই। এমন ঘটনা অস্বস্তিকর হলেও তা দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত কোনো হুমকি নয়’।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম