
প্রিন্ট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৭ এএম

ডা. মো. ফারুক হোসেন
প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
বিশ্বে প্রতি বছর ২০ মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে পালিত হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য, জনগণকে সচেতন করে তোলা, যেন মুখের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২০২৪ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত দিবসটির ক্যাম্পেইন থিম বা প্রচারণার বিষয় ‘অ্যা হ্যাপি মাউথ ইজ অ্যা হ্যাপি বডি’ অর্থাৎ সুস্থ মুখে সুস্থ শরীর। স্বাস্থ্যবান মুখ হলো স্বাস্থ্যবান শরীরের প্রতিচ্ছবি। মানসিক উন্নতির জন্য মুখের যত্ন নিতে হবে। আপনার যদি মুখে যন্ত্রণাদায়ক রোগ থাকে, আঁকাবাঁকা দাঁত থাকে অথবা মুখের কারণে আপনাকে দেখতে ভালো লাগে না তাহলে সেটি মনের ওপর প্রভাব ফেলবে। মুখের স্বাস্থ্য কখনোই বাকি শরীর থেকে আলাদা করা যাবে না। হৃদরোগ ইতোমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যাধি হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, যা মাড়ি রোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যানসার বা টিউমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ব্যাকটেরিয়া ‘ভিরিড্যানস স্ট্রেপটোকক্কাই’ রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো লিভারের রোগের সঙ্গে পেরিওডন্টাল রোগের যোগসূত্র রয়েছে। পেরিওডন্টাইটিসের সঙ্গে লিভারের রোগ নন অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা বা ক্যানসারের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাড়িতে সবুজ দাগ এবং অ্যানামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস মুখের অভ্যন্তরে জেনিটাল ওয়ার্টস বা গোটার সৃষ্টি করে থাকে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মুখের ক্যানসার এবং সারভাইক্যাল ক্যানসার হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের মাসিকের সময় মুখে আলসার এবং জ্বালাপোড়া হতে পারে। আবার মাসিক বন্ধ হয়ে গেলেও মেনোপজের সময়ও মুখে আলসার বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। ডাউন সিনড্রোমের শিশুদের জন্মের সময় জিহ্বায় ফোলাভাব থাকতে পারে। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে মুখে ও ঠোঁটে বারবার জ্বরঠোসা ও ক্ষত দেখা দিতে পারে। যাদের প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই মুখে নানাবিধ আলসার বা ঘা দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিডের অভাব হলে ঠোঁটকাটা ও তালুকাটা শিশু জন্মগ্রহণ করতে পারে। মাড়ি রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। প্রি-ম্যাচিউর বেবি জন্ম নিলে বাচ্চার ওজন কম হবে, শ্বাসকষ্ট হবে, শিশু কানে কম শুনতে পারে, শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মাড়ি রোগের কারণে কারও কারও ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে অ্যাবরশন হতে পারে। অথচ গর্ভকালীন সময়ে শুধ গর্ভবতী মায়ের ভালোভাবে দাঁতের স্কেলিং করিয়ে নিলে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে মাড়ি রোগজনিত কোনো জটিলতা দেখা দেবে না। তাই দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভ ও হাসিখুশি মানসিক জীবনের জন্য মুখের যন্ত নিন। হাসি মানুষকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।